ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্কুল শেষে চা বিক্রি করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় মিজান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
স্কুল শেষে চা বিক্রি করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় মিজান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): শিশুটির নাম মিজান। বয়স ১০ কি ১১।

শৈশবের গণ্ডী পার না হলেও ভবিষ্যতের ভাবনা এসে পড়েছে তার ওপর। সংসারের টানোপোড়েন তার শিশুমনেও সঞ্চয় প্রবৃত্তি জাগিয়ে তুলেছে।

ফলে স্কুল শেষে এলাকায় চা বিক্রি করে টাকা জমাতে শুরু করেছে সে। ইচ্ছে আছে সঞ্চয়ের এ টাকা দিয়ে বিদেশ গিয়ে ভালো উপার্জনের, পরিবারের সুদিন ফেরানোর।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া এলাকায় প্রতিদিন বিকেল বেলাতেই দেখা মেলে মিজানের। সে ওই এলাকাতেই চা বিক্রি করে। তার চা বিক্রি করার এলাকাও খুব ছোট। শুধুমাত্র কয়েকটা মার্কেটেই সে চা বিক্রি করে।

চুনকুটিয়ার রশ্মি সুপার মার্কেট, বিজয় টাওয়ার, আলী অ্যান্ড ব্রাদার সুপার মার্কেট ও সেলিনা ভবনের সামনে সে চা বিক্রি করে।

সম্প্রতি মিজানের চা পান করতে করতে কথা হয় তার সঙ্গে। সে জানায় পরিবারের কথা ও ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা।

মিজানের বাবার নাম মো. জাহাঙ্গীর ও মা আমিরন বেগম। বাবা দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুতে ভ্যানগাড়ি ও রিকশা ঠেলার কাজ করেন, মা গৃহিণী। মিজানরা দুই বোন ও চার ভাই। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইদের মধ্যে সে তৃতীয়। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার ভেদুইড়া এলাকায়। চুনকুটিয়া এলাকার চান মিয়ার কলোনিতে তারা সপরিবারে ভাড়া থাকে।

মিজান বাড়ির কাছেই শুভাঢ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।

চা বিক্রি ও পড়ালেখা একসঙ্গে কিভাবে করে জানতে চাইলে সে বলে, ‘সকাল বেলা বই-খাতা লইয়া প্রাইভেট পড়তে বাইর হই। হেরপর ইস্কুলে যাই। ইস্কুলতে আইয়া দেহি মায় ফ্লাক্স ভইরা চা বানাইছে, হেই চা লইয়া বেচতে বাইর হই। ডেলি চা বেইচা ১৪০/১৫০ টাকা কামাই। ’

চা বিক্রির টাকা দিয়ে কি করে জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমার একটা মাইট্যা ব্যাংক আছে চা বেচার টাহা অই ব্যাংকে জমা রাহি। ব্যাংকে টাহা কোনোদিন মায় থোয় কোনোদিন আমিও থুই। ’

সে আরো বলে, ‘হারা জীবনতো ঢাহা থাকতে পারুম না। ব্যাংকে জমা টাহা দিয়া দেশে যাইয়া একটা গরু কিননা গরু পালুম আর দুধ বেচা টাহা জমাইতে থাকুম। গরু পালতে পালতে আমি বড় অইয়া গেলে জমাইনা টাহা দিয়া আমি বিদেশ যামু। বিদেশ যাইয়া আমি অনেক টাহা কামামু, অনেক বড় লোক অইয়া যামু। আমরা আর গরিব থাকমু না। ’


এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, কর্মজীবী শিশুদের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জে কর্মজীবী শিশুদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও এ বিষয়ে কাজ করছে।

গরিব শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পরে সে জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। বছরের শুরুতেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যের বই।

তিনি আরো বলেন, এসব শিশু যেন ঝড়ে না পড়ে সে বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। মিজানের মতো যারা রয়েছে তাদের সহায়তায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
আরবি/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।