ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দীপন হত্যার এক বছরেও চার্জশিট দেয়নি পুলিশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৬
দীপন হত্যার এক বছরেও চার্জশিট দেয়নি পুলিশ

ঢাকা: জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে সোমবার (৩১ অক্টোবর)। এ হত্যা মামলার মূল আসামিরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, তৈরি হয়নি মামলার চার্জশিটও।

এ কারণে হতাশ দীপনের পরিবারের সদস্যরা।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে দুর্ব‍ৃত্তদের হাতে নিহত হন দীপন। একইদিন দুপুরে আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের লালমাটিয়া কার্যালয়ে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা।

দীপন হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী ড. রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমে শাহবাগ থানা পুলিশ মামলার তদন্তে থাকলেও পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়।  

ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুই জঙ্গি শামীম ওরফে সমীর ওরফে সিফাত ও আব্দুস সবুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা দু’জনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তারা’।

‘তাদের স্বীকারোক্তি মতে, গ্রেফতারকৃত শামীম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন ‘মাসুল’। কোনো হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে যে দলটিকে প্রস্তুত করা হয়, তার নেতৃত্বে যিনি থাকেন, তাকে ‘মাসুল’ বলা হয়’।

রিমান্ডে সিফাতের কাছ থেকে দীপন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পর্কেও অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, ‘শামীম ও সবুর স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, দীপন হত্যাকাণ্ডে তারা ১০ থেকে ১২ জন অংশ নেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও অনেকের ছদ্মনাম পাওয়া গেছে। তাদেরকেও খোঁজা হচ্ছে। যদিও খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কাজ, তবুও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি’।

চার্জশিট প্রস্তুতের বিষয়ে পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মূল আসামিদের খুঁজে বের না করা পর্যন্ত চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

হত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, শামীম ও সবুরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ড. অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামে বই প্রকাশ করায় দীপনকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হত্যায় যে পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল, সেই একই কায়দায় দীপনকেও হত্যা করা হয়।  

এদিকে হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত দীপনের পরিবারের সদস্যরা। দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুনেছি, দু’জন আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।  এখনো মূল আসামিদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। আমরা যা হারিয়েছি, তা ফিরে পাওয়ার নয়। জাতীয় স্বার্থেই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। এ ধরনের ঘটনার যেন আর প‍ুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে সরকারের সজাগ দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন’।

দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘বিচারের বিষয়ে কোনো কিছু বলার নেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না’।

লেখালেখির কারণে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন ব্লগার ও লেখককে প্রাণ দিতে হয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর কয়েক দিনের মাথায় খুন হন ব্লগার রাজীব হায়দার।  

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসীদের চাপাতির কোপে নিহত হন বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়। এরপর একে একে খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীলয়, ফয়সল আরেফিন দীপন ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা. অক্টোবর ৩১, ২০১৬
আরএটি/এমজেএফ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।