ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘দুই সন্তান আর জাগৃতি আমার শেষ ঠিকানা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৬
‘দুই সন্তান আর জাগৃতি আমার শেষ ঠিকানা’ ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: ঘর আলো করে পৃথিবীতে এসেছিল রিদাদ ফারহান। স্বামীর প্রথম স্মৃতিচিহ্ন।

২০০১ সালের ১২ নভেম্বর জন্ম নেওয়া প্রথম সন্তানের মাঝেই তাই স্বামীর সুখস্মৃতি খোঁজেন ড. রাজিয়া রহমান। কিন্ত‍ু কোনোভাবেই ভুলে যেতে পারেন না গত বছরের ৩১ অক্টোবরের দুঃসহ স্মৃতি!

রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় ওই দিন নিজের জাগৃতি প্রকাশনীতে ফয়সাল আরেফিন দীপনের ওপর হামলা চালায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। হামলায় গুরুতর আহত দীপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়েও বাঁচানো যায়নি।

নারকীয় সেই হামলা ও স্বামীর মৃত্যুর অধ্যায় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিজের কষ্টের কথা তুলে ধরেন দীপনের স্ত্রী রাজিয়া। জানান, দুই সন্তান আর স্বামী দীপনের রেখে যাওয়া জাগৃতিই তার শেষ ঠিকানা।

রাজিয়া বলেন, ‘২০০১ সালের ১২ নভেম্বর। এ দিনটি আমাদের সংসার জীবনের অন্যরকম একদিন। স্মৃতির পাতায় সব সময় কড়া নাড়ে। এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না। এ দিনে ঘর আলো করে পৃথিবীতে এসেছিল প্রথম সন্তান রিদাদ ফারহান। স্বামীর প্রথম স্মৃতিচিহ্ন’।

‘প্রথম সন্তানের মুখ দেখে দীপন এতো খুশি হয়েছিল যে, তা প্রকাশ করার ভাষা নেই। ওর চোখে-মুখে অন্যরকম উচ্ছ্বাস। রিদাদকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলো। এ আনন্দের বহির্প্রকাশ শুধু অনু্ভব করা যায়, বোঝানো যায় না’।

স্বামীর সঙ্গে সুখের সংসারের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে রাজিয়া বলেন, ‘দীপন আমার বাল্যকালের সাথী, বন্ধু, সহপাঠী, সবশেষে স্বামী। ও মারা যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিটি দিন কেটেছে তার সঙ্গে। এখন তাকে ইচ্ছে করলেও ছুঁতে পারি না, দেখতে পাই না। ছেলে-মেয়েরাও বাবা বলে ডাকতে পারে না। সারাক্ষণ ছায়ার মতো আমার চারপাশে বিচরণ করে। প্রতিটি মুহূর্তে ওকে মিস করে ওরাও (সন্তান)। দীপনের স্মৃতি জড়িয়ে আছে পুরোটা জীবন জুড়ে। কোনো কিছুই ভোলার নয়’।
 
‘সংসার জীবনের সবটুকুই ছিল মধুময়। কোনো কালো ছায়া আমাদেরকে আলাদা করতে পারেনি’।

রাজিয়া জানান দীপনের ভালো লাগার নানা বিষয় সম্পর্কেও। ‘দীপন আইসক্রিম খুব পছন্দ করতো। প্রিয় পোশাক ছিল পাঞ্জাবি। সারাক্ষণ গান শুনতো। জাগৃতিতে বসে, কিংবা গাড়িতেও গান শুনতো। তার গান শোনার প্রচণ্ড নেশা ছিল। এক কথায় সে ছিল গানপাগল মানুষ। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথের গানের পাশাপাশি আধুনিক ব্যান্ডের গানও ছিল তার প্রিয়’।

রাজিয়া আরও বলেন, ‘ঘোরাঘুরি ছিল তার কাজের অংশ। সিলেট ছিল তার খুব প্রিয় জায়গা। আমরা প্রায়ই সিলেটে যেতাম। দীপন যে মাসে মারা যায়, সে মাসেও দু’জনে কক্সবাজার গিয়েছিলাম’।

‘বই পড়তে পছন্দ করতো। সুনীল, সমরেশ ও হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের পোকা ছিল ও। ভীষণভাবে ব্লগ পড়তে ও লিখতেও পছন্দ করতো’।

চেখের জল সামলে নিয়ে রাজিয়া বলেন, ‘দীপন ছিল অনেক বেশি বন্ধুবৎসল। তার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না, শত্রুতাও ছিল না’।

দীপনের পরিবারের সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে থাকেন। কিন্তু বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ও মা রোকেয়া প্রধান থাকেন পরীবাগের বাসায়। ছেলে রিদাদ নবম শ্রেণিতে ও মেয়ে রিদমা আদনি ৭ম শ্রেণিতে পড়ে।
 
চল্লিশোর্ধ্ব দীপন ছিলেন দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়। বোন শুচিতা শারমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষক। মা ফরিদা প্রধান রোকেয়া হলের জনপ্রিয় প্রাধ্যক্ষ ছিলেন।

দীপনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমববার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে দীপন স্মৃতি সংসদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৬
আরএটি/এমজেএফ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।