ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জাহাজ আমদানির নামে অর্ধশত কোটি টাকা পাচার!

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৬
জাহাজ আমদানির নামে অর্ধশত কোটি টাকা পাচার!

ঢাকা: কাগজে কলমে এলসির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি দেখানো হলেও এর আড়ালে ৭০ লাখ ২৫ হাজার ডলার (প্রায় ৫৬ কোটি ‍টাকা) পাচার করেছেন বেসরকারি ব্যাংক আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান।  

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বদিউর রহমান আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকও বটে।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৯৫ সালে। ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লিমিটেডেও বদিউর রহমানের মালিকানা রয়েছে। তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। দেশ ও বিদেশে বদিউর রহমানের বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।  
চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ২৯১ সভায় সভাপতিত্ব শেষে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেন বদিউর রহমান।  

জানা গেছে, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান সিঙ্গাপুরের নাগরিক। সেখানে এরিয়েল মেরিটাইম নামে নিজের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে।  

এই এরিয়েল মেরিটাইম ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মেসার্স মাস্টার স্ক্রাপ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এমভি মাস্তিকাউয়াতি নামের একটি পুরোনো জাহাজ (স্ক্র্যাপ) বিক্রি করে। জাহাজটির দাম ধরা হয় ৭০ লাখ ২৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ।

জাহাজ বিক্রির এলসির প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার মাধ্যমে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে অতিরিক্ত মূল্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলে ৭০ লাখ ২৫ হাজার ডলার দাম দেখিয়ে এই স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির নামে সিঙ্গাপুরে ওই অর্থ পাচার করেন বদিউর।  

বিষয়টির ব্যাপারে ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠিও দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতেও বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছিল।  
তবে অর্থ পাচারের মাধ্যমে ব্যাংকিংখাতের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বিষয়টি ধামাচাপা দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন গোপন থাকলেও আতিউর রহমানের বিদায়ের পর আবার নতুন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে বদিউরের অর্থপাচারের বিষয়টি উঠে আসে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা পরিদর্শন গিয়ে এই অর্থ পাচারের খোঁ‍জ পেয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট কাজ করছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
বদিউর রহমানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে দিলকুশায় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বেশ কয়েকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান রোববার (৩০ অক্টোবর) বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজ আমাদের বোর্ড সভা আছে, আমি কোন কথা বলতে পারবো না। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।