ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পিরোজপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাল্টা চাষ

শফিকুল ইসলাম জয়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৬
পিরোজপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাল্টা চাষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পিরোজপুর: পিরোজপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাল্টা চাষ। জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে ছোট বড় তিন শতাধিক মাল্টা বাগান।

 

পিরোজপুর সদর উপজেলার গ্রামে গ্রামে মাল্টার চাষ হচ্ছে। মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে।  

উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেন অমলেষ রায়। ২০০৮ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামে ছয় একর জমিতে গড়ে তোলেন মাল্টার বাগান। তিনি বারি মাল্টা-১ জাতের চারা দিয়ে চাষ শুরু করেন। বর্তমানে অমলেষ রায়ের বাগানে রয়েছে ৪৫০টি মাল্টা গাছ। বারি মাল্টা-১ ছাড়াও তার বাগানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাল্টা।  

তিনি লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করে বাগান করেছিলেন। এরই মধ্যে তার সব খরচ উঠে গেছে। এখন তিনি মাল্টা গাছ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করে বিক্রি করছেন।  

অমলেষ রায় বলেন, বর্তমানে আমার বাগানে বারি মাল্টা-১, ইন্ডিয়ান, বেরাকাঠ ও পাকিস্তানি জাতের মাল্টা গাছ রয়েছে। আমার কাছ থেকে মাল্টার চারা কিনে আশপাশের গ্রামের অনেকেই বাগান গড়ে তুলেছেন।  

৫০ দশমিক ৮৬ একর জমির ওপর মাল্টার বাগান করেছেন পিরোজপুর সদর উপজেলার বড় খলিশাখালী গ্রামের শেখ হুমায়ুন কবির (৪৫)। তার বাগানে ২০ হাজার মাল্টা চারার পাশাপাশি রয়েছে আমসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ফলের গাছ।  

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হুমায়ুনের মাল্টা বাগান দক্ষিণ অঞ্চলের সব চেয়ে বড় বাগান। এ বাগান পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান।  

হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৫ সালের জুন মাসে তিনি মাল্টার বাগান করেন। এ বছর তার বাগানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ গাছে মাল্টা ধরেছে। আর এতেই খরচের অনেকটাই উঠবে বলে আশা করছি।  

বিদেশি মাল্টার তুলনায় বেশ রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে তার মাল্টার চাহিদা অনেক। প্রতি কেজি মাল্টার পাইকারি দর ১২০-১৩০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মাল্টা ১৪০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলে মাল্টা চাষকে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ বছরই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এক লাখ মাল্টা চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে আমার বাগানে ৩০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। মাল্টা চাষ করে পিরোজপুরের অনেক কৃষকই সফলতা পাচ্ছেন।  

পিরোজপুর সদর উপজেলার দূর্গাপুর, খলিশাখালী, কদমতলা ও খানাকুনিয়ারী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গাছে থোকা থোকা মাল্টা। প্রতিটি গাছে ৭০ থেকে ১০০টি মাল্টা ধরেছে। পাখির হাত থেকে মাল্টা রক্ষা করতে অনেক বাগান জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এদিকে, মাল্টা বাগান দেখতে অমলেষ ও হুমায়ুনের বাগানে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।  

অমলেষ রায় জানালেন, তার বাড়িতে এসে মানুষ মাল্টা ও মাল্টার চারা কিনে নেন।

কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাল্টার কলম করা হয় বাতাবি লেবু গাছের সঙ্গে। আর বাতাবি লেবু দেশের সর্বত্র থাকায় মাল্টার চাষও পিরোজপুরসহ সারা দেশে করা সম্ভব। এছাড়া নিচু ও পতিত জমি উঁচু করে সেখানে মাল্টা চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে পিরোজপুরে মাল্টার ৩১৯টি বাগান রয়েছে। যার আয়তন প্রায় ৪৫ হেক্টর। এর মধ্যে পিরোজপুর সদরে ৮৫টি, নেছারাবাদে ৫৯টি, জিয়ানগরে আটটি, কাউখালীতে ১২টি, নাজিরপুরে ৮০টি, ভান্ডারিয়ায় ২৫টি এবং মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৫০টি বাগান গড়ে উঠেছে।   
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন, পিরোজপুরে যেভাবে মাল্টার বিপ্লব ঘটছে; তাতে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাজারে তেমন কোনো দেশি ফল থাকে না। তাই এ সময় বাজারে মাল্টার চাহিদা থাকে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবুল হোসেন তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, পিরোজপুরের বাগানের মাল্টা আকারে বড় এবং সুস্বাদু। এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী। পিরোজপুর জেলায় পাঁচ বছরে তিন শতাধিক মাল্টা বাগান করা হয়েছে। এসব বাগানে ৪৫ হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে। এ অর্থকরী ফসলটি চাষে কৃষি বিভাগ উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে।  

বাংলাদেশ সময়:  ০৯৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৬
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।