ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত আইনমন্ত্রীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৬
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত আইনমন্ত্রীর

ঢাকা: ‘দ্বৈত শাসনের ফলে বিচার বিভাগের কাজে বিঘ্ন ঘটা’ নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিচারের ক্ষেত্রে মামলার জট কমাতে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে একমত মন্ত্রী।

মঙ্গলবার (০১ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি প্রধান বিচারপতিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। বিচারপতির বক্তব্য আমি শুনেছি, পড়েছি এবং দেখেছি।

‘অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি বিচারপতি যেটা বলেছেন তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। ’

নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকের নবম বর্ষপূর্তিতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বাণীতে সোমবার (৩১ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর উক্ত বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে।

‘অপরদিকে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ। ১১৬ অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্যপদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে। এবং বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়’।

প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ১১৬ অনুচ্ছেদ যেটা ১৯৭২ সালের ছিল, সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা। ১১৬ অনুচ্ছেদ বদলালো কবে, ১৯৭৮-এ। সেটাকে এখনকার যে রূপ আছে…।

মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন ষোড়শ সংশোধনীতে অনুচ্ছেদ ৯৬-কে ১৯৭২’র সংবিধানে যা ছিল তা হুবহু করা হয়েছে। এখন ওনারা, দু’টি ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টের বিচাপতিদের অপসারণ এবং রিমুভাল ফর ইন ক্যাপাসিটি অর মিস কনডাক্টস গ্রস মিসকনডাক্ট। দু’টো কারণে তাদের রিমুভ করা যায়, এ আইনটা একদম ১৯৭২ সালে যা ছিল তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সেটা হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছে যে আলট্রা ভায়ার্স অব কনস্টিটিউশন। এটা এখন আপিল বিভাগে আপিল হিসেবে আছে। ’

‘একদিকে বলা হচ্ছে যে ওইটা হিস্ট্রোরিক্যাল মিসটেকস, আবার বলা হচ্ছে যে ১১৬, বাহাত্তরে যা আছে তাতে ফিরে যেতে হবে। এটা তো স্ব বিরোধী কথা। ’
 
১৯৭২ সালের সংবিধানে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মেইনটেন করার প্রভিশন ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেই চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মেইনটেন করা ইমপর্টেন্ট। সেই ক্ষেত্রে আমি বলবো আজকের যে প্রশ্ন..।
 
মন্ত্রী বলেন, বিচারিক কার্যক্রম, ১০০ অনুচ্ছেদ ১১৬ এই গুরু দয়িত্ব দিয়েছে আমাকে? আমাকে মন্ত্রী হিসেবে তো করেনি। এটা করেছে রাষ্ট্রপতিকে, রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন হেড অব দ্য স্টেটস এবং জুডিশিয়ারিতে অ্যাপানমেন্ট, প্রমোশন, ট্রান্সফার এবং রিম্যুভাল- এগুলো কোনো ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠীর কারণে যেন একটা বিচারককে রিম্যুভ করা না যায় বা তাকে অসুবিধায় না ফেলা যায় সেটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

সেই জন্যই রাষ্ট্রের এক নম্বর ব্যক্তিকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনিই সব বিচার করার পরে তাদেরকে সরানো যাবে কি না, তাদের দোষ সবকিছু দেখে তারপরে তিনি স্বাক্ষর করবেন- এই জিনিসটা তাকে দেওয়া হয়েছে। এবং সেটা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ সাপেক্ষেই।
 
‘আমার মনে হয় না, রাষ্ট্রপতি এখন পর্যন্ত এমন কাউকে রিম্যুভ করেছেন যেখানে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করা হয় নাই। তাহলে আজকে এ প্রশ্ন কেন এলো?’
 
সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদে ফিরে যাওয়া উচিত কিনা- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের বিচারিক কাজের স্বাধীনতা হচ্ছে সব চেয়ে বড় জিনিস। সংবিধানের ১১৬-ক অনুচ্ছেদ, বিচারিক স্বাধীনতার ব্যাপারে গ্যারান্টি। সেই জন্য ১১৬-ক থাকলে আমার মনে হয় না আর ১১৬ আর ১৯৭২ সালে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। তারপরও এ রকম দরজা বন্ধ হয়নি।  
 
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় সংসদীয় কমিটিতে গেলেও ১১৬ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব কোথা থেকে যায়নি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, আজকে যখন নতুন করে সবকিছু হয়ে গেছে তখন এই ধরনের প্রস্তাব আসাটা আমার কাছে একটু আশ্চর্য লাগছে।
 
‘কিন্তু যদি এমন হয় যে বিচার ব্যবস্থাকে আরও স্বাধীন করার জন্য, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাই করবে। ১১৬’র পরিবর্তন-সংশোধনের প্রয়োজন হলে সেটাও করা হবে। ’
 
রাষ্ট্রপতির হয়ে আইন মন্ত্রণালয় বদলি, পদোন্নতি করছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, অন্তত পক্ষে দুই-আড়াই বছরে পরিস্কার বলতে পারি, আমি সুপ্রিম কোর্টের সব সুপারিশ মানার চেষ্টা ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।
 
সুপ্রিম কোর্ট কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সারা দেশের জনগণের, সুপ্রিম কোর্ট একটা ইনস্টিটিউশন, যে বিচার করে এবং মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। এটার ব্যাপারে আমি কথা বলার ক্ষেত্রে যেমন সাবধানতা অবলম্বন করি, সেটার ব্যাপারে কাজ করতেও অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করি।
 
নতুন করে সংশোধনের প্রশ্নের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই বলেও দাবি করেন আইনমন্ত্রী।
 
তিনি বলেন, হয়তো কাজ করতে গিয়ে অনেকের চিন্তাভাবনার আসতে পারে। প্রধান বিচারপতি যেটা বলেছেন তার প্রধান পিন্সিপাল হচ্ছে মামলার জট নিরসনে ব্যবস্থা করা। আমি তার সঙ্গে সেই দিকে মামলার জট নিরসনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে একমত।  
বিভিন্ন স্তরে বিচাররকের ৯৫৫টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৬৫৭ পদ পূর্ণ এবং ২৯৮ পদ শূন্য রয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এসব শূন্য পদগুলোতে নিয়োগের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
তিনি বলেন, জডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের নবম পরীক্ষায় ১০০ জন সহকারী জজকে নিয়োগের জন্য সুপারিশের আজকে ফাইল এসেছে। আজকে পাস করবো। এছাড়া দুই দফায় ২৭০ জনের নিয়োগের জন্য কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
 
বিচারাধীন থাকায় ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে মন্তব্য করেননি আইনমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৬
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।