ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রেলওয়ে স্টেশনে ঘুমানোদের আসন্ন ‘শীত’ আতঙ্ক

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৬
রেলওয়ে স্টেশনে ঘুমানোদের আসন্ন ‘শীত’ আতঙ্ক ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: ‘নিজের বাড়ি নেই, ভাড়া করে থাকার টাকা-পয়সা নেই, একারণে রেল স্টেশনে শুয়ে থাকি। আর এতে কি ঘুম আসে, হাজার লোক ভর্তি! চরম মশা,তার উপর ঠেলাঠেলি তো আছেই।

গরমকাল থাকায় এখন ঘুমানো যাচ্ছে। শীত আসলে তো খারাপ অবস্থা। কাপড়-চোপড় নেই,খালি মেঝেত শুয়ে থাকা যায় না। শৈত্য প্রবাহ হলে কষ্টের সীমা থাকে না। এজন্য শীত আসিলে মোর বয় নাগে। ’

শরতের স্নিগ্ধ পরশ শেষে পাতা ঝরা হেমেন্তের আগমন ঘটেছে বেশ আগেই। প্রকৃতিতে চলছে শীতের আগমন ধ্বনি।

মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ঘড়ির কাটায় ঠিক পৌনে দুইটা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পুরো এলাকাজুড়ে ও প্ল্যাটফর্মে শুয়ে আছে শত শত মানুষ। এর মাঝখান থেকে মশা মারার জন্য জেগে ওঠে আসন্ন ‘শীত’ আতঙ্কের কথা জানান রেলওয়ে স্টেশনের কুলি অজিদুল ইসলাম।

শুধু অজিদুল নয়,তার মত খোলা আকাশের নিচে থাকা হাজারো মানুষের কাছে শীত মানে আতঙ্কের নাম। যাদের দিন কাটে কোনো রকম টেনেটুনে, তাদের কাছে গরম কাপড় কেনা বেশ অসাধ্য। তাই তো শীত আসলে তারা থাকেন আতঙ্কে। সেই সঙ্গে খুঁজে বেড়ান কোথায়-কে গরীবদের জন্য গরম কাপড় বিতরণ করে।

অজিদুল উপার্জনের আসায় সুদুর রংপুর থেকে ঢাকা এসেছেন। গ্রামের বাড়িতে থাকে তার তিন ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী। সারাদিন যে টাকা ইনকাম করেন –নিজের খরচ রেখে মাস শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ‘যে কয় টাকা ইনকাম করি, বাসা ভাড়া করে থাকলে বাড়িতে আর দিবার পাইম না। এ কারণে, সারা দিনের খাটা-খাটুনি শেষে রাইতটা এখানে পার করি দেই। অভ্যাস হয়ে গেছে। শীত আসলে কষ্ট হয়, খালি মেঝেতে শুয়ে থাকা যায় না। ত্রাণের কম্বল পাইলে অইটা বিছায় ঘুমাইলেও গাঁয় দেওয়ার কিছু থাকে না-‘ঝামেলা’ বলে মাথা চুলকাতে থাকে অজিদুল।

অজিদুলের মত খোলা আকাশের নিচের আরেক বাসিন্দা মর্শিদা। যার জন্ম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। বিয়ে করেও স্বামী-স্ত্রী রাত পার করছেন প্লাটফর্মেই।

তিনি বলেন, বরের ইনকাম কম। নেশা করে, সংসার চলে না, বাসা ভাড়া নেওয়ার মত টাকা নেই। আমি লুচনি বিক্রি আর আমার স্বামী মানুষের মালামাল টানে কিছু টাকা ইনকাম হয়। আর তা দিয়েই কোনো রকমে দুজনের চলে আরকি। শীতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমানো কষ্ট। এ কারণে পুরান ছেড়া সোয়েটার গাঁয়ে দিয়া এক বারে ঘুমাই’।

শীতের সময় প্ল্যাটফর্মে জায়গা নিয়ে ঝাগড়াও হয় জানান মর্শিদা। তিনি বলেন, যারা রেলওয়ে স্টেশনের খোলা স্থানে ঘুমায় তারাও শীতকালে প্ল্যাটফর্মের ভেতর চলে আসে। আবার বাইরে তো শীত পড়ে। এ জন্য জায়গা নিয়ে ঝগড়া হয়’।

দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, মানুষ অনেক বড়লোক হয়েছে, তারা যদি আমাগো মত গরীবের দিকে তাকিয়ে কিছু গরম কাপড় দিতেন তাহলে আমাদের বড় উপকার হতো বলেন সম্মিলিত কন্ঠে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১,২০১৬
এমসি/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।