ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষায় এগিয়ে সোনাগাজী উপকূলের মেয়েরা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৬
শিক্ষায় এগিয়ে সোনাগাজী উপকূলের মেয়েরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় প্রান্তিক জনপদের একটি স্কুল ওলামা বাজার হাজী সেকান্তর মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।

 

এখানে নতুন আসা যে কেউই স্কুলটি দেখে ‘গার্লস স্কুল’ ভেবে বসবেন।

কিন্তু এ স্কুলে যৌথ শিক্ষা দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশই ছাত্রী।

 

শুধু এ স্কুলই নয়, এ ‍উপকূলীয় জনপদের প্রায় সব স্কুলেই ছাত্রীদের সংখ্যার হার এ রকম। হোক সেটা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকাতে যেখানে শিক্ষার হার খুবই কম, বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার। সেখানে সোনাগাজী উপকূলের স্কুলগুলোতে ছাত্রীদের হার অনেক বেশি।

নারী শিক্ষার ‍এ অগ্রগতির কারণে প্রান্তিক এ জনপদের পরিবারগুলোতে মেয়েদের গুরুত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি কমে গেছে বাল্যবিয়ের হার।
 
এসব বিষয়ে কথা হয় ওলামা বাজার হাজী সেকান্তর মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি জানান, সরকার মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি চালু করেছে, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলেই তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ যেকোনো চাকরিতে যোগ দিতে পারছে। এসব কারণে অনগ্রসর এ জনপদের মেয়েরা স্কুলে আসতে শুরু করেছে।
 
উপকূলের নদী ভাঙনকবলিত চর চান্দিয়া এলাকায় দেখা গেলো গ্রাম্য মেঠোপথ পেরিয়ে কয়েক কিশোরীকে স্কুলে যেতে। তারা স্থানীয় হাজী তোফায়েল আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।

এদের একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মাহফুজা খাতুন জানায়, তার বাবা ও ভাইয়েরা অন্যের বাড়িতে মজুরি দেন। কিন্তু তাকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন ‍তারা। তাছাড়‍া স্কুলে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ ছাড়াও সরকারি উপবৃত্তি পাওয়া যায়।


গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মজহারুল ইসলাম জানান, এলাকার সবাই কষ্ট করে হলেও তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চায়। মেয়েরা শিক্ষিত হলে অন্তত ভালো কোথায় বিয়ে দেওয়া  যাবে বলে তাদের ধারণা।
 
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুর নবী জানান, সোনাগাজী উপজেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে মেয়েদের সংখ্যা ৬০ শতাংশ।
 
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আল মোমিন জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের অংশগ্রহন ৫৪ শতাংশ।

মেয়েদের এগিয়ে থাকার ব্যাপারে তিনি জানান, এ অঞ্চল দারিদ্রপীড়িত হওয়ায় ছেলেরা স্কুলে না এসে বিভিন্ন কাজ করে। ফলে ছেলেরা সংখ্যায় কম পড়াশোনা করে। কিন্তু মেয়ের ঘরের কাজের পাশাপাশি উপবৃত্তি সুবিধার কারণে স্কুলে আসতে শুরু করেছে।

তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মেয়েদের সংখ্যা বেশি হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনা অধিকাংশ মেয়ে। তার আগেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিদুর্শী সম্বোধী চাকমা জানান, এ উপজেলায় শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ব্যাপক। ফলে বিষয়টি প্রতিনিয়ত তদারকি করছে উপজেলা প্রশাসন।

তিনি আরো জানান, উপবৃত্তিসহ নানা সহযোগিতা দেওয়া হয় ছাত্রীদের। বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রেও সচেতন প্রশাসন। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে এ অনগ্রসর জনপদের মেয়েরা শিক্ষার মাধ্যমে অগ্রসর হয়ে উঠবে বলে তার আশা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।