ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার জব্দকৃত যানবাহন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৬
নাটোরে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার জব্দকৃত যানবাহন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর: মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রীতা এবং আইনি জটিলতায় নাটোরে পুলিশের জব্দকৃত প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক যানবাহন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন গাড়ির মালিক ও পুলিশ।

এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, ট্রাক, বাইসাইকেল ও ভ্যান। জব্দকৃত এসব গাড়ির বাজার মূল্য আনুমানিক কয়েক কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জব্দকৃত এসব গাড়ি মামলার আলামত হিসেবে আদালত ও থানা চত্বরে বছরের পর বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকছে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মরিচা ধরে বেশির ভাগই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসব গাড়ির ইঞ্জিন।

অন্যদিকে দিন দিন জব্দ বা আটক করা যানবাহনের সংখ্যা ক্রমে বেড়ে যাওয়ায় এবং তা মামলার আলামত হিসেবে সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট কোর্ট পুলিশ ও থানা পুলিশকেও পড়তে হচ্ছে বিপাকে।

নাটোর আদালত ও বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭টি থানা, হাইওয়ে থানা ও আদালত চত্বরে অন্তত ৩৩৫টি যানবাহন পড়ে আছে। এর মধ্যে কোর্ট চত্বরে ১৫০টি, সদর থানায় ৯০টি, লালপুর থানায় ২০টি গুরুদাসপুরে ২০টি, বড়াইগ্রামে ২৫টি, বাগাতিপাড়ায় ৭টি, নলডাঙ্গা থানায় ৪টি, সিংড়ায় ১২টি, হাইওয়ে থানায় ১টি, বনপাড়া তদন্ত কেন্দ্রে ৬টি যানবাহন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব যানবাহনের অধিকাংশই মোটরসাইকেল। তবে প্রাইভেটকার, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভুটভুটি, লেগুনা, পিকআপভ্যান এবং ট্রাকও রয়েছে।

নাটোর কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, জব্দকৃত এসব গাড়ির বেশির ভাগই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক বহন, দুর্ঘটনা কবলিত, বৈধ কাগজপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধমূল কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে।

যা বিভিন্ন থানায় মামলার আলামত হিসেবে রাখা হয়েছে। জেলা সদরসহ ৭টি থানা ছাড়াও কোর্ট, এবং হাইওয়ে থানা চত্বরে দিনে দিনে আটক গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসব জব্দকৃত গাড়ির একাধিক মালিকের সঙ্গে কথা বললেও গণমাধ্যমকে তাদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানান তারা। তবে তাদের সবার মধ্যেই শঙ্কা বিরাজ করছে।

জব্দকৃত একটি গাড়ির মালিক শহরতলীর বড়হরিশপুর এলাকার বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশের দায়ের করা মামলায় নিজের জামিন হলেও শুধুমাত্র আইনি জটিলতায় গাড়ির জামিন করাতে পারছেন না তিনি।

এসময় তিনি আশঙ্কা করে বলেন, আর কিছুদিন এভাবে থাকার পর আইনি জটিলতা কাটিয়ে উঠলেও হয়তো মোটরসাইকেল নয়, লোহা লক্কর ফেরত নিতে হবে।

বাগাতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, সঠিক কাগজপত্র না থাকায় তিনিসহ অনেকেই গাড়ি ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্বেও শুধুমাত্র হয়রানির কারণে গাড়ি ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গাড়িগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ মনে করে আরো সহজ উপায়ে ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি।

নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার ঘোষ জব্দকৃত যানবাহনের সুষ্ঠু সংরক্ষণ অথবা তা নষ্ট হওয়ার আগেই নিলামে বিক্রি করে সে অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।  

নাটোর জজ কোর্টের পিপি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করলে আদালত দ্রুত জামিন দিয়ে দেন। হয়রানির কোন কারণ নেই। জব্দকৃত এসব গাড়ি যাতে দীর্ঘ সময় পড়ে থেকে নষ্ট না হয় সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অবহিত করবেন বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।