ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মিরপুরে কর্মজীবী নারীদের প্রশান্তির নাম ‘মহিলা বাস’

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
মিরপুরে কর্মজীবী নারীদের প্রশান্তির নাম ‘মহিলা বাস’ ছবি: রানা

মিরপুর-১০ গোল চত্বর থেকে: ‘আফা আসেন। ওই আফা, খাড়ায় আছেন ক্যান, যাইবেন না? তাড়াতাড়ি ওঠেন।

মতিঝিল, মতিঝিল মহিলা বাস, মহিলা বাস। ভাই থামেন, এটা মহিলা বাস। ’

বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) সকালে মিরপুর -১০ নম্বর গোল চত্বেরে এভাবেই হাঁক-ডাক দিয়ে মহিলা যাত্রীদের গাড়িতে উঠাচ্ছিলেন বিআরটিসি মহিলা বাসের হেলপার শাহনাজ। তার কাছে যাত্রীরা যেন ঘরের মানুষ। বাসের নিয়মিত যাত্রীদের সঙ্গে তার ভাবও অনেক। ডেকে এনে, গাড়ি থামিয়ে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করেও নারী যাত্রীদের বাসে ওঠান তিনি।

রাজধানীর ভিড়, ধাক্কাধাক্কি ও ঠেলাঠেলি করে পরিবহনে ওঠার ঝামেলার মধ্যে মিরপুরের ‘মহিলা বাস সার্ভিস’ কর্মজীবী নারীদের কাছে যেন এক প্রকারের প্রশান্তির নাম। এ সার্ভিসের কারণে পুরুষের গা গেঁষে দাঁড়ানো, সিট নাই বলে হেলপারের অবহেলা, অনাকাঙিক্ষত স্পর্শসহ নানা ধরনের পরিবহন ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন স্কুলগামী নারী শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য কর্মজীবী নারী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নারীদের কর্মস্থলে যাওয়ার সুবিধার্থে সরকারের উদ্যোগে অফিসের দিনগুলোতে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে পৌনে ৮টায় মতিঝিলে একটি,  ৮টা ও সোয়া ৮টায় দুইটা মহিলা বাস গুলিস্তানের উদ্দেশে ছাড়ে যায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাফিয়া আহমেদ। তার কর্মস্থল পল্টনে। সাড়ে ৯টায় তাকে অফিসে পৌঁছাতে হবে। প্রতিদিন পৌনে ৮টায় মহিলা বাসে করে যাতায়াত করেন তিনি।

রাফিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মহিলা বাস না থাকলে, আমার চাকরি করা হতো না। আগে অনেক কষ্ট করে যাতায়ত করতে হতো। সিট নাই বলে, হেলপার নিতে চাইতো না। ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, বাসের ভিতর নানা হয়রানি তো আছেই। মহিলা বাস থাকায় ঝামেলা থেকে বেঁচে গেছি।

রাফিয়ার মতো শত-শত কর্মজীবী নারী সরকারের দেওয়া বিআরটিসি মহিলা বাসের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। এদের একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা নাজিয়া আফরিন। তিনি বলেন, নারীদের লোকাল বাসে করে যাতায়ত করা অনেক ভোগান্তির ও হয়রানিমূলক কাজ।

সংসার সামলিয়ে আমাদের অফিসের কাজ করতে হয়। রাস্তঘাটে সমস্যা পড়লে মানসিক সমস্যা হয়। যাতায়তের কষ্টের কারণে নারীরা বাইরে কাজ করতে চায় না। সরকার মিরপুরে তিনটা মহিলা বাস দিয়েছে। এতে নারীদের মধ্যে কর্মস্পৃহা তৈরি হয়েছে। আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গাড়িতে সিট না থাকলে একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করে যেতে পারি, বাদর ঝোলা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও সমস্যা হয় না।

এজন্য তিনি রাজধানীর অন্যান্য রুটেও মহিলা বাস সার্ভিস চালুরও দাবি জানান। মহিলা বাসের ভিতরে পরিস্থিতি ঘুরে দেখা যায়, নারীরা একে অপরের সঙ্গে গল্প গুজবে ব্যস্ত। নিয়মিত এক বাসে যাতায়ত করার কারণে কারো-কারো মধ্যে ভালো সম্পর্কও তৈরি হয়েছে। একজন দেরি করলে হেলপারকে বলে বাস দুই-এক মিনিট দেরি করাচ্ছেন। সব নারী যাত্রীদের ভ্র‍াতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়।

মহিলা বাসের হেলপার দিলারা বলেন, ‘সব জায়গায় চাহিদা অনুসারে নারীদের জন্য আলাদা বাস থাকা দরকার। ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে গাড়িতে উঠতে নারীদের কষ্ট হয়। গাড়ির লোকজনও ঝামেলা মনে করে নিতে চায় না। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের ধরে-ধরে গাড়িতে উঠাই। যারা নিয়মিত যাতায়ত করে তাদের সবার কাছে আমার নম্বর আছে। দেরি হলে ফোন দেয়, তাদের জন্য তিন-চার মিনিট দেরিও করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এমসি/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।