ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সংকেত ঐতিহাসিক তেলিখালি যুদ্ধ

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সংকেত ঐতিহাসিক তেলিখালি যুদ্ধ

ময়মনসিংহ: ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার ৮ মাস পর ময়মনসিংহের সীমান্তঘেষা জনপদ হালুয়াঘাটের তেলিখালি ক্যাম্পে ৫ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ হয়।

এ যুদ্ধে ১২৪ পাক সেনা নিহত হয়।

খতম হন পাকিস্তানিদের সহযোগী রাজাকারসহ আরো শতাধিক। শহীদ হন ৭ মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর ২১ জওয়ান।

মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহের প্রথম বিজয়ের দিন হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে ৩ নভেম্বরের কথা। এ যুদ্ধটি তাই এখানকার মুক্তিযুদ্ধে প্রথম ও ঐতিহাসিক বিজয়।

৫ ঘণ্টার এ যুদ্ধ ছিল সম্মুখযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সংকেত হিসেবে বিবেচিত হয় যুদ্ধটি।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাঙালিদের  মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত ময়মনসিংহ। সম্মুখ সমরে ময়মনসিংহ শহরে টিকতে না পেরে পাততাড়ি গুটিয়ে নেয় পাকিস্তানিরা।

পরে রাজাকারদের সহায়তায় সীমান্তঘেঁষা জনপদ হালুয়াঘাটের তেলিখালি ক্যাম্পে ঘাঁটি করে তারা। কিন্তু এ ক্যাম্পের পতন ঘটে ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর।

ঐতিহাসিক তেলিখালি যুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল। মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ফেরিওয়ালা বিমল পাল বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন এ যুদ্ধের সার কথা।

বলতে থাকেন, ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি পুরো ইউনিট ছিল তেলিখালি ক্যাম্পে। সিদ্ধান্ত হয় ত্রিমুখী আক্রমণে তাদের দখলে থাকা এ ক্যাম্পের পতন ঘটানোর।

সেদিন কয়েকটি জায়গা থেকে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রাত ১২টার পর তেলিখালি অভিমুখে যাত্রা করে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী। এক ঘণ্টা হেঁটে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছক অনুযায়ী তেলিখালির দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব এই তিনদিকে অবস্থান নেয় ভারতের ১৩ রাজপুত রেজিমেন্ট ও পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।

হালুয়াঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কবিরুল ইসলাম বেগ জানান, তেলিখালি ক্যাম্পে প্রথমে এক মুক্তিযোদ্ধার গুলিতে লুটিয়ে পড়ে পাকিস্তানি পাহারাদার। এরপরই শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। ক্যাম্পের ভেতরের বাংকারগুলোতে তখন আলো জ্বলছিল।

যৌথবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বর্ষণ শুরু করলে পাকিস্তানিরা বাংকার থেকে পাল্টা গুলি চালায়। সকাল ৮টা অবধি পাকিস্তানিরা প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়।

২ নভেম্বর রাতের যুদ্ধ থামে পরদিন ৩ নভেম্বর সকাল ৮টায়। টানা ৫ ঘণ্টার এই যুদ্ধে একদিকে গুলিবর্ষণ, আরেকদিকে ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকে গ্রেনেড চার্জ করে যৌথবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা। তেলিখালি ক্যাম্পের পাকিস্তানি সেনা সদস্য ও রাজাকারসহ মোট ২৩৪ জন নিহত হন।

বিমল পালের ভাষ্য মতে- একজন পাকিস্তানি সেনা ও বেশ কয়েকজন রাজাকার সেদিন আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে তাদেরকে হত্যা করা হয়। এ যুদ্ধে নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও তার সঙ্গে থাকা ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২১ জন মিত্রবাহিনীর সদস্য শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন অনেকে।

হালুয়াঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কবিরুল ইসলাম বেগ বাংলানিউজকে বলেন, এ যুদ্ধে বিজয় ও সাফল্য ছিল ঐতিহাসিক, গৌরবোজ্জ্বল এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক। তেলিখালি যুদ্ধে পাকিস্তানিদের সঙ্গে প্রচণ্ড গোলাগুলির ফাঁকে ফাঁকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতেন মুক্তিযোদ্ধারা।

ঐতিহাসিক তেলিখালি যুদ্ধে শহীদ ৭ মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিফলক। এখানে শহীদরা হলেন- হালুয়াঘাটের আক্তার হোসেন, জামালপুরের শওকত আলী, ফুলপুর উপজেলার হযরত আলী, শাহজাহান, রঞ্জিত গুপ্ত, সিপাহী ওয়াজিউল্লাহ এবং সদর উপজেলার আলাউদ্দিন।

তবে এ যুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কোন খোঁজ রাখে না কেউ, এমন অভিযোগ উঠেছে তাদের পরিবার থেকে। হালুয়াঘাটের শহীদ আক্তার হোসেনের ছেলে ইউসুফ আলী সরকার বলেন, আমার বাবাকে এখনো রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়া হয়নি। অভাব আমাদের নিত্যসঙ্গী হলেও কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।