ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘মোনায়েম খানের সব সম্পত্তি বাতিল করা উচিত’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
‘মোনায়েম খানের সব সম্পত্তি বাতিল করা উচিত’ ছবি- জি এম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

ঢাকা: আমরা শুনেছি এদেশে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধীতাকারী সরকারিভাবে যিনি সবচাইতে বেশি করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন তাদেরই পরিবারের কাছে এখানে একটি জমি গত ৫০ বছর পড়ে আছে। তাই আমার রিকোয়েস্ট থাকবে যদি এটা সত্যি হয়, সেই জমি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, যদি তাদের কারো নামে হয়, তাহলে সেটি এখনই ক্যানসেল (বাতিল) করা হোক।

এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সি‌টি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক।
 
রাজধানীর বনানী কবরস্থান সড়কে সরকারি প্রায় ৫ বিঘা জ‌মি দখল করে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দেশবিরোধী অন্যতম কুচক্রী ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান গড়ে তোলেন ‘বাগ-ই-মোনায়েম’।  
 
কিন্তু কোনো বৈধ নথি দেখাতে না পারায় বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) মূল সড়ক থেকে ১৬ ফুট ভেতরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের গড়ে তোলা ‘বাগ-ই-মোনায়েম’ ভবনের সামনের অংশ ভেঙে ফেলা হয়। এখানে একটি গাড়ির শো-রুম ছিলো সেটিও গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মোনায়েম খানের বাড়ির ভেতরের দুই দিকের গেট লাগোয়া যে দুটি ঘর ছিলো সে দুটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
 
বিকেল ৪টার পর ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল ওই এলাকা পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।  
 
মেয়র আনিসুল হক বলেন, জায়গাটি গত ৫০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন কোনো একজন লোক। আমি শুনেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম মোনায়েম খান জায়গাটি দখল করে রেখেছেন। আমার কাছে কাগজ নেই, শুনেছি। ১০ কাঠা জায়গা, যা রাজউকের সবুজ বেষ্টনি’র আওতায়।
 
জায়গাটি আমরা আজ দখলমুক্ত করলাম। এখানে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত করা যেতে পারে। গাছপালা রোপণ, বসার জায়গাও করা যেতে পারে। দীর্ঘ ৫০ বছর অন্য সরকারগুলো কেন এ জায়গার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি তা খতিয়ে দেখা দরকার, অনুরোধ করেন মেয়র।  

যদি স্বাধীনতাবিরোধী অন্যতম কুচক্রী মোনায়েম খান জায়গাটি দখলে নিয়ে থাকেন তবে তার সব সম্পত্তি বাতিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মেয়র।
 
বনানীর উচ্ছেদের ঘটনাকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে মেয়র বলেন, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের মতো এটি আরও একটি ঐতিহাসিক কাজ। আমরা আজ বনানীর এ জায়গাটি দখলমুক্ত করলাম।
 
এ সময় মেয়র বলেন, গুলশান-বনানীর প্রায় প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনোভাবে আমাদের জায়গা দখল করে আছে। আমরা শত শত বিঘা জায়গা দখল করে আছি। আমাদের কর্মকর্তারা তাদের কাছে একবার না তিনবার যাচ্ছেন। আমরা বার বার রিকোয়েস্ট করেছি। আমাদের অনুরোধের সবটুকু শেষ করেছি। এরপর আর বলবো না, সরাসরি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেবো। আমরা এক ইঞ্চির বাইরে অ্যালাউ করবো না।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর মোনায়েম খান ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন। তার বরাদ্দ নেওয়া জমির পরিমাণ ১০ কাঠা। ১১০/এ নম্বরে ভুয়া হোল্ডিং বানিয়ে এ জমি দখল করা হয়। কেবল তাই নয়, সেই বা‌ড়িতেই মোনায়েম খানের দুই কন্যা গড়ে তুলেছেন অন্বেষা নামে একটি স্কুলও। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একটি দুর্নীতিবাজ চক্র।
 
এসময় ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে‌ডিয়ার জেনারেল সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমোডর আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় কাউন্সিলর এবং ডিএনসিসি’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
দুপুর আড়াইটার সময় ডিএনসিসি’র আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (জোন-৩) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামান শরিফ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। অভিযান শেষে ডিএনসিসি’র কর্মকর্তারা বাঁশের খুঁটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেন। একইসঙ্গে বেড়া দিয়ে দেওয়া হয়।
 
** ভেঙে ফেলা হলো ‘বাগ-ই-মোনায়েম’
* মোনায়েম খানের সেই বা‌ড়ি ভাঙার প্রস্তু‌তি চলছে 
* মোনায়েম খানের অবৈধ বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু (ভিডিও)
** ৫ বিঘা জমি দখল করে মোনায়েম খানের বাড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬/আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা
এসএম/জেডএস​

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।