ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ক্যালেন্ডার দেখে খাঁচায় মাছ চাষ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
ক্যালেন্ডার দেখে খাঁচায় মাছ চাষ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নবাবগঞ্জ, ঢাকা: নবাবগঞ্জ উপজেলার বলমন্তচর এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৩)।

জীবিকার অন্বেষণ প্রায় ১৮ বছর সৌদি আরবের জেদ্দার একটি দোকানে কাজ করতেন তিনি।

একদিন দোকানে একটি বাংলাদেশি ক্যালেন্ডারের ছবি মনে ধরে তার। ক্যালেন্ডারে খাঁচায় মাছ চাষের ছবি দেখে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে উৎসাহিত হন তিনি।

পাঁচ বছর আগে ছুটিতে দেশে ফিরে খাঁচায় মাছ চাষ করার পদ্ধতি জানতে ছুটে যান চাঁদপুর জেলায়। সেখানে তিনি প্রাথমিকভাবে হাতেখড়ি নেন খাঁচায় মাছ চাষের এবং সঙ্গে করে নিয়ে আসেন দু’টি খাঁচা। বাড়ির পাশে ইছামতি নদীতে খাঁচা দু’টি স্থাপন করে সেখানে তেলাপিয়া মাছ চাষ করেন। তাতে লাভবান হওয়ায় সৌদি আরবের ভিসা বাতিল করে দেন তিনি। চার মাস পর আরও ১০টি খাঁচা স্থাপন করেন। এখন ইছামতি নদীতে তার প্রায় ৬২টি মাছের খাঁচা রয়েছে। খাঁচায় মাছ চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি ও তার পরিবার। খাঁচায় মাছ চাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, খাঁচায় মাছ চাষ অনেক লাভজনক। একবার খাঁচা স্থাপন করলে ও নিয়ম অনুযায়ী পরিচর্যা করলে প্রায় পাঁচ বছর টিকিয়ে রাখা সম্ভব। একটি খাঁচা স্থাপন করতে খরচ হয় ১৫-১৬ হাজার টাকা। প্রতি চার মাস পর খাঁচার মাছ বিক্রি করা যায়। প্রতিটি খাঁচা থেকে চার-সাড়ে চার মণ মাছ পাওয়া যায়। এতে বছরে খরচ বাদ দিয়ে একটি খাঁচা থেকে ১৮-২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।

তিনি আরও জানান, তার দু’টি পুকুর রয়েছে। একটি পুকুরে ধানি (ধানের সমান) পোনা চাষ করা হয়। অন্য পুকুরে একটু বড় সাইজের পোনা চাষ করা হয়। পোনাগুলো কেজিতে ৪০টি উঠলে নদীর খাঁচায় এনে ছেড়ে দেওয়া হয়। চার মাসেই এসব মাছ বিক্রির উপযোগী হয়।

একটি খাঁচা তৈরিতে প্রয়োজন হয় বাঁশ, জাল ও প্লাস্টিকের ড্রাম। বাঁশ দিয়ে খাঁচার ফ্রেম তৈরি করে তাতে জাল জড়িয়ে ড্রাম দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে রেখে খুঁটি দিয়ে আটকে রাখা হয়, জানান তিনি।

দেলোয়ার হোসেন তার অতীত হাতড়ে বলেন, আমি যখন সৌদিতে ছিলাম তখন অন্যের দোকানে কাজ করতাম। সেখানে প্রায় ১৮ বছর কাজ করার পর আমার চোখে একটি ক্যালেন্ডার পড়ে; যাতে খাঁচায় মাছ চাষের একটি ছবি ছিল। সেই ছবি দেখে আমি খাঁচায় মাছ চাষে উৎসাহিত হই। আমার সাফল্য দেখে এখন নবাবগঞ্জের অনেকেই এ ব্যাপারে উৎসাহিত হচ্ছে।

আমার ৬২টি খাঁচা থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় হয়। খাঁচা পাহারা দেওয়ার জন্য আমার বেতনভুক্ত দু’জন কর্মচারী রয়েছে। এজন্য আমি বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার পেয়েছি। খাঁচায় মাছ চাষ করায় নবাবগঞ্জ উপজেলায় আমার ব্যাপক পরিচিতিও হয়েছে, বলেন তিনি। নবাগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইয়্যেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পুকুরে এবং খাঁচায় মাছ চাষের পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। নদীতে পানি বহমান তাই মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম জেনে খাবার দিতে হবে। এমন খাবার দিতে হবে যেন খাবার ভেসে চলে না যায় এবং খাঁচার ভেতরেই ভেসে থাকে।

খাঁচায় মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে মাছ চাষ করে বেকার জনগোষ্ঠী স্বাবলম্বী হতে পারবে বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
বিএসকে/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।