ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে শিক্ষার দ্যুতি ছড়াচ্ছে রেশমার ‘ইচ্ছা পূরণ’

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
সিলেটে শিক্ষার দ্যুতি ছড়াচ্ছে রেশমার ‘ইচ্ছা পূরণ’ ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: বছর তিনেক আগের কথা। দিনটি ছিলো ১৪ ফেব্রুয়ারি।

হবিগঞ্জের একটি পার্কে বন্ধুদের নিয়ে কেক কেটে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করছিলেন জান্নাতুল রেশমা রূপা। সেদিন কিছু ছিন্নমূল শিশুর দৃষ্টি ছিলো কেকটির দিকে।   যে কারণে কেক না খেয়ে পথশিশুদের খাইয়ে ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন রেশমা ও তার বন্ধুরা।   ছিন্নমূল শিশুদের বিলিয়ে দেন ভালোবাসা দিবসের আনন্দ।    

সেদিন ‘ইচ্ছে পূরণ’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করার স্বপ্ন বোনেন রেশমা। যার মূল লক্ষ্য পথশিশুদের ইচ্ছা পূরণ করা, তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। রেশমার সেই স্বপ্ন বন্দি থাকেনি চার দেয়ালে। পথশিশুদের মধ্যে শিক্ষার দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে রেশমার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইচ্ছা পূরণ’।  

অঙ্কুরেই ঝরে পড়া ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন রেশমা। জীবিকার তাগিদে যেসব বাবা-মা শিশুদের নামিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি ও মাদক ব্যবসায়, সেসব শিশুদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে টেনে আনছে রেশমার ‘ইচ্ছে পূরণ’ সংগঠন।  

সংগঠনের ব্যানারে ‘প্রজন্ম শিশু শিক্ষা নিকেতন’ নামে রেল স্টেশন ও বিভিন্ন কলোনিতে ভ্রাম্যমাণ স্কুল চালু করা হয়েছে। কোনো ধরনের প্রণোদনা ছাড়াই ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন হবিগঞ্জের মেয়ে জান্নাতুল রেশমা।

সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইনবিভাগের ছাত্রী রেশমার অবসর সময়টুকু ব্যয় করেন এ সংগঠনের পেছনে। ইচ্ছে পূরণ সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাজ করছেন একঝাঁক কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। যারা ছিন্নমূল শিশুদের একত্রিত করে স্কুল পরিচালনা করছেন। তবে এর ব্যয়ভার নিজেরাই চাঁদা তুলে বহন করেন রেশমারা।

সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ প্রান্তে ২০/২২ জন শিশুকে ভ্রাম্যমাণ স্কুলে পড়াচ্ছেন মদন মোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রাসেল মিয়া। সংগঠনের হয়ে তিনিও স্বেচ্ছাশ্রম দেন। এখানে শিক্ষা নিতে আসা শিশুদের বেশিরভাগেরই বাবা নেই, কারও মা নেই। এসব শিশুরা কেউ রেলস্টেশনে ভিক্ষাবৃত্তি করে। তারচেয়েও ভয়াবহ মাদকদ্রব্য কেনা-বেচা ও বহনে এসব শিশুদের ব্যবহার করা হয়। যে কারণে শিশুরা বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্যের সঙ্গে পরিচিত। তারা নিজেরাও মাদক সেবন করে। এই শিশুদের আলোর পথে আনতে কাজ করছে রেশমার ‘ইচ্ছে পূরণ’।    

এরই মধ্যে সিলেট রেলস্টেশন এলাকায় প্রজন্ম শিশু শিক্ষা নিকেতনে নিবন্ধিত ৩০ জন শিশুর নাম। যারা নিয়মিত এসে ক্লাসে উপস্থিত হয়।   শুধু রেলস্টেশনেই নয়, হবিগঞ্জে ও মৌলভীবাজারে স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের ব্যানারে তিনটি টিম ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করছে।  

রেশমা তার হোস্টেল সংলগ্ন কালোনির শিশুদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে ১৯টি শিশুকে বই ও কাপড় দিয়েছেন। পড়াশোনার জন্য একটি কাঁচা ঘরে খুলে দিয়েছেন লাইব্রেরি। শিশুরা যাতে ভ্যানগার্ড হয়ে কাজ করতে পারে, স্কুলে আনতে পারে, এজন্য ওই ওয়ার্ডে ১০জন শিশুকে দিয়ে লিটল ফাইটার্স নামে একটি শিশু সংগঠনও করেছেন।  

জান্নাতুল রেশমা বাংলানিউজকে বলেন, ছিন্নমূল শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দিলে নিজেরাই ভালোমন্দ বুঝতে পারবে।   গত তিনমাস সিলেট রেলস্টেশনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটের মাইজগাঁও বিভিন্ন রেলস্টেশন ছাড়াও নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের নিয়ে কমিটি করে ‘প্রজন্ম শিশু শিক্ষা নিকেতন’ করার ইচ্ছা আছে।

সংগঠনের নামকরণের ব্যাপারে রেশমা জানান, প্রথম অবস্থায় তার বাবাও বিষয়টি ভালো চোখে দেখতেন না। এখন বাবাই তার প্রেরণার উৎস। পরিবারের সবাই একাজে উৎসাহ যোগান। আর্থিক সহায়তা দেন তার সৌদি প্রবাসী ভাই।

ভতিষ্যতে ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিশু নিবাস করার ইচ্ছে রেশমার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এনইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।