ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তিন চাকায় জীবন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
তিন চাকায় জীবন ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: মেস কিংবা ফ্যামিলি বাসায় থাকেন না তারা। কোনো বস্তিতেও নয়।

কিন্তু প্রতিনিয়ত রাজধানী ঢাকায় তাদের বিচরণ। তিন চাকার রিকশায় তাদের জীবন।

রিকশায়ই রাত্রিযাপন করেন তারা। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দিনগত রাতে এমন কয়েকজন চালকের দেখা মিলেছে রাজধানীর শাহবাগ, পলাশী, ঢাকা মেডিকেল, ফার্মগেট, মহাখালীসহ কয়েকটি  এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ চালক নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। কেউ আবার মোবাইল ফোনে গান শুনছিলেন।

 

রাত ২টার দিকে বারডেম হাসপাতালের সামনে রিকশায় ঘুমানোর আয়োজন করছিলেন রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে আসা আব্দুল করিম।

ঘুমানোর আয়োজন চলছে নাকি জিজ্ঞেস করতেই মুখে বিশাল একটা হাসি দিয়ে বললেন-হুম। এখানেই ঘুমাবো। রিকশার সামনের দিকে পা বাড়িয়ে সিটে বসে ঘুমাই। ওই যে দেখেন না আরও অনেকেই ঘুমাচ্ছে। কি আর করবো এটাই তো আমাদের জীবন। এই তিন চাকার ওপরে।

 

আব্দুল করিম বলেন, প্রতিদিন ১০০ টাকা রিকশার মালিককে দিতে হয়। আর খাওয়া খরচ বাদে চার-পাঁচশ’ টাকা থাকে। মেসে থাকলে দেড়-দুই হাজার টাকা শুধু থাকা খরচেই চলে যায়। মেসে না থাকলেও ৮০ টাকায় দুই বেলা খেতে পারি। কিন্তু খাই না, কারণ মেসের খাবার ভালো লাগে না।


পরিবার সম্পর্কে  আব্দুল করিম বলেন, বিয়ে করছি অনেক আগে। এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলের বয়স ১২ বছর; স্কুলে পড়ে। আর মেয়ের বয়স দুই। সবাই রাজশাহী থাকে। আমি সবজি বিক্রেতা। যখন ব্যবসা ভালো যায় না তখন ঢাকায় চলে আসি রিকশা চালাই। আর তখন এ রিকশাই সব। ‍

তিনি আরো বলেন, কামরাঙ্গীচরের গ্যারেজ থেকে একটা রিকশা নিয়ে বের হই। চার/পাঁচদিন আর গ্যারেজে যাই না। এ সময়ে রিকশাই ঘরবাড়ি। চার/পাঁচদিন পরে টাকা জমা দেই। গ্যারেজের মালিকের সঙ্গে দেখা করে আসিকিছুদূরে এগুনোর পর আরো এক রিকশা চালককে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা গেলো। পরিচয় জানতে চাইলে বলেন, নাম আনোয়ার, বাড়ি নীলফামারী। ঢাকায় রিকশা চালাই, রিকশাই আমার ঠিকানা। কারণ ঢাকায় আমাদের কোনো ঠিকানা নেই। এই রিকশাতে থাকি। এখানেই ঘুমাই।

বৃষ্টি এলে কি করেন জানতে চাইলে ‌আনোয়ার বলেন, নো প্রবলেম। বেটার (ভালো) জায়গা আছে। ঢাকায় এখন বড় বড় ফ্লাইওভার আছে। মোড়ে ওভারব্রিজ আছে। সেগুলোর নিচে চলে যাই। বেশির ভাগ সময়ে গায়ে প্ল্যাস্টিক দিয়ে ঘুমিই পড়ি। আর এখন তো তেমন বৃষ্টি হয় না। তাই সমস্যাও নেই।  

আয়ের টাকা কোথায় রাখেন জানতে চাইলে আনোয়র  বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। মোবাইল ফোন আছে না! বিকাশ আছে না! এটার মাধ্যমে পাঠাইয়া দিই। সারাদিন রিকশা চালানোর পর খাওয়া ধাওয়া শেষে যা থাকে তা বিকাশ করে পাঠাই বাড়িতে। রাতে পকেটে থাকে মাত্র ৫০ টাকা। এর বেশি রাখি না। খরচ বাঁচাতে বাসা ভাড়া নেন না তারা।

তাই এভাবে তিন চাকার ওপরে রাত কাটান বলে জানান রিকশা চালকেরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬

ইএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।