ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শাহজাহানের এলাচ চাষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
শাহজাহানের এলাচ চাষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বেনাপোল (যশোর): অদূর ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে আর এলাচ আমদানি করতে হবে না। দেশের মাটিতে উৎপাদিত এলাচ নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হবে বিদেশে।

এতে সৃষ্টি হবে অনেকের কর্মসংস্থান। সরকার পাবে বৈদেশিক মুদ্রা।

কথাগুলো বলছিলেন, বেনাপোল পৌরসভার নারানপুর গ্রামের শাহজাহান। পাঁচ বছর আগে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী শাহজাহান শখের বসে এলাচ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সঠিক দিক নির্দেশনা না পাওয়ায় একাধিকবার এলাচ চাষে ক্ষতির শিকার হয়েছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। কৃষি বিভাগ ও মসলা ইনস্টিটিউশনের কর্মকর্তারা একাধিকবার আমার ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তবে তাদের কাছ থেকে এলাচ চাষের যুতসই কোনো পরামর্শ পাইনি। পরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে এলাচ চাষ করে সফলতা পেয়েছি। বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষে আগ্রহীরা ২০১৭ সালের মধ্যেই আমার কাছ থেকে চারা কিনতে পারবেন। এজন্য বীজতলা তৈরি করেছি। যেখানে প্রায় ২৫ হাজার চারা হবে। চারা বড় হলে আগ্রহী চাষিদের কাছে বিক্রি করবেন তিনি।

বাংলানিউজকে তিনি আরো বলেন, ভারত, চীন ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের উর্বর জমি এলাচ চাষের উপযোগী। মজার ব্যাপার হলো, এলাচ চাষে আলাদা কোনো জমি প্রয়োজন হয় না। পাঁচ বছরের পরিশ্রমে আমি দেখেছি, অন্য গাছের ছায়া তলে এলাচের ভালো ফলন হয়। প্রথমে অন্য ফসলের মাঠে এলাচ চাষ করেছিলাম। কিন্তু তাতে ফলন ভালো হয়নি। তাই এবার একটি মেহগনী বাগানে (গাছের ছায়াযুক্ত স্থান) এলাচ চাষ করেছি। এতে পূর্বের চেয়ে ফলন ভালো হয়েছে। যে কেউ বাড়ির আঙ্গিনা অথবা ফলদ বৃক্ষের বাগানে এ জাতের সবুজ সুঘ্রান এলাচ চাষ করতে পারবে। সরকার যদি বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষে আগ্রহীদের অার্থিক সহযোগিতা করে; তাহলে খুব অল্প সময়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বাংলানিউজকে জানান, শাহজাহান প্রায় তিন বিঘা জমিতে এলাচ চাষ করেছেন।   কিছু কিছু গাছে ফল ও ফুল এসেছে। তবে এখনো তার ক্ষেতের এলাচ বিক্রি শুরু হয়নি। কৃষি বিভাগ তার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছে। তার ক্ষেতের সুগন্ধী এলাচের মান ভালো; বীজ মোটা। বগুড়া মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউশনের পরিচালক ভাগ্যরানী শাহ ও প্রধান কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কলিম উদ্দিনসহ কৃষি বিভাগের একটি দল গত বছরের প্রথম দিকে তার এলাচ ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। এদিকে, কোথা থেকে এলাচের বীজ সংগ্রহ করেছেন জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, বিষয়টি না হয় গোপনই থাক।

বিভিন্ন জাতের এলাচের মধ্যে  সবুজ-কালো, নিল-সাদা ও বেগুনীসহ ১৩ জাতের এলাচ আমদানি করা হয়। চা-ই হোক বা পোলাও, মাংস, মিষ্টান্ন; বাঙালির রান্নায় সুগন্ধ ছড়াতে এলাচ অন্যতম প্রধান মসলা। যার রয়েছে অসংখ্য ঔষধী গুণ। দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বড় দানা এলাচের দাম ১৬০০ টাকা, মাঝারি দানা এলাচ ১৪০০ টাকা ও ছোট দানার এলাচ ১২০০ টাকার মতো। সুগন্ধী এই মসলাটি যদি নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি তাহলে আর এতো টাকা দিয়ে এলাচ আমদানি করতে হবে না বলে মনে করেন শাহজাহান।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
এজেডএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।