ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হস্তচালিত তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ ডালিমের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
হস্তচালিত তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ ডালিমের

নবাবগঞ্জ, ঢাকা থেকে: ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার তাঁতপল্লীগুলো যেনো কালের বির্বতনে বিলীন হওয়ার পথে। এখন আর তেমন আগের মতো তাঁতকলের খট খট শব্দ শোনা যায় না।

একসময় গ্রাম-বাংলার মা-বোনদের পরনের শাড়ি অথবা পুরুষের পরিধেয় লুঙ্গির একমাত্র মাধ্যম ছিলো তাঁতশিল্প।

আধুনিক যুগে মেশিনের তাঁতের কাছে হস্তচালিত তাঁত হার মানতে বাধ্য হচ্ছে। কারও যেনো কিছুই করার নেই। সবাই সময়ের কাছে আজ অসহায়।

এরই মধ্যে নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা ইউনিয়নের সাধাপুর গ্রামের এক হস্তচালিত তাঁতশিল্পী মো. ডালিম (৩০) যুদ্ধ করে চলেছেন এ বিলুপ্তপ্রায় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে। পুরো গ্রামে তার পরিবারটিই এখন হস্তচালিত ‘তাঁতশিল্পী’।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তাঁতশিল্পী ডালিম বলেন, আমার দাদার কাছে থেকে আমার বাবা এ তাঁতশিল্পের শিক্ষা রপ্ত করেছিলেন। আর আমি শিখেছি আমার বাবার কাছ থেকে। বর্তমানে এ শিল্পের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। তবুও আমাদের বাপ-দাদার পেশাটাকে টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধ করছি। আমার তিন বছরের শিশু আরিফুলকে মাঝে মধ্যে তাঁতে বসাই। আমি চাই আমার সন্তান আমাদের বংশের এ আদি পেশা সম্পর্কে জানুক। এ বিষয়ে তার ধারণা থাকা দরকার।

ডালিম জানান, আমাদের এলাকায় আগে প্রায় ১শ’টিরও বেশি ঘরে হস্তচালিত তাঁতের কাজ চলতো। এখন আমরা এক ঘরই এ ব্যবসাকে টিকিয়ে রেখেছি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, হস্তচালিত তাঁতে শিল্পে যখন এক দিনে দুই থেকে তিনটি লুঙ্গি তৈরি করা যায়, সেখানে মেশিনে ১০টি করে লুঙ্গি তৈরি হয়। তাই আর কেউ অর্ডার দিতে চায় না। আগে প্রায় এক মাস আগে অর্ডার পাওয়া যেতো।

স্মৃতি হাতড়ে ডালিম বাংলানিউজকে বলেন, দেশে-বিদেশে একসময় আমাদের অঞ্চলের তৈরি তাঁতবস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিলো। জয়পাড়ার লুঙ্গি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি করতে হয়েছে। বর্তমানে মেশিনের তাঁতবস্ত্র তৈরির কারণে আজ আর তেমনভাবে কেউ এ কাজ করে না।

তিনি জানান, উৎপাদনের সময় তারা প্রয়োজনীয় মূলধন জোগাড় করতে পারেন না। অধিকাংশ সময় বাজারে কাঁচামাল পাওয়া যায় না। সরকার যদি সুতার দাম কমিয়ে সহজ শর্তে কিছু ঋণ সহয়তা করতো তাহলে অনেক উপকার হতো। সাধাপুর এলাকার তাঁতিরা আগে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ইত্যাদি তৈরি করতো কিন্তু এখন শুধু লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই তৈরি করা হয় না।

তাঁতি সম্প্রদায়ের একটা অংশ তাদের পৈতৃক পেশাটাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। অনেকে পেশা বদলে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ডালিমের বড়ভাই মো. সলিম ‘তাঁতশিল্প’কে ছেড়ে এখন বাজারে চায়ের দোকান করেন।

ডালিম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, আর্থিক অভাব অনটন ও কাঁচামালের অধিক দামের কারণে তাঁতশিল্প আজ ধ্বংসের মুখে পড়েছে। তবে এখনও দক্ষ কারিগর রয়েছে যারা পৈতৃক পেশাকে কোনো রকমে টিকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু সরকারের অসহযোগিতা ও আধুনিক মেশিনের প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে বেশিরভাগ তাঁতশিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।


বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
এএটি/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।