ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘বাস বে’ কি বাঁচবে? (ভিডিও)

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
‘বাস বে’ কি বাঁচবে? (ভিডিও) ছবি: দীপু মালাকার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফার্মগেট (ঢাকা):  বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৯টা। মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিলো নিউ ভিশন পরিবহনের একটি বাস।

মুহূর্তেই লেগে যায় যানজট।
 
আর যায় কোথায়, চোখের পলকে বাসটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন সার্জেন্ট মামুন ও আশরাফ। ইশারায় বাম সাইডে পার্কিং করতে বললেন। কিন্তু তাতে সায় দিচ্ছিলেন না চালক।   কিন্তু সার্জেন্টও নাছোড়বান্দা। বাসটি যতক্ষণ না পার্কিং করলেন ততক্ষণ সামনে সামনেই থাকলেন। খানিকটা পথ আগলে থেকেই।
 
পার্কিং করানো হলে ঝটপট কাগজও চেয়ে নিলেন চালকের কাছ থেকে। চালক জালাল মিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সার্জেন্ট তাকে প্রশ্ন করলেন, ‘বাস বে’ থাকতেও কেন রাস্তার উপর দাঁড় করিয়েছেন। মিনিট দুয়েকের মধ্যে মামলা দিয়ে দিলেন।  
 
মামলার কথা শুনলে অনেকের বুক শুকিয়ে আসে। কিন্তু বাস চালক জালাল হোসেনের কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলো না।   ভাবটা এমন দ্রুত মামলা দেন চলে যাই। এ পর্যন্ত কতগুলো মামলা খেয়েছেন জানতে চাওয়া হলে ঝটপট জবাব দিলেন এক-দেড়শ হবে। কতদিনে এই মামলা হয়েছে জানতে চাইলে বলে, সাত বছরে।   যার বেশির ভাগই না-কি রং সাইডে পার্কিং করার মামলা।
 
প্রশ্ন ছিল তারপরও কেন রং ‍সাইডে পার্কিং করলেন। জবাবে যাত্রীদের উপরেই দোষ চাপালেন জালাল হোসেন। বললেন, যাত্রীরাই বলে এখানে দাঁড়াতে হবে, ওখানে নামাতে হবে।   আর একটু সামনে গিয়ে দাঁড়াও। না হলে বাপ মা তুলে গালি দেয়, মারপিটও করে। যে কারণে তারা না-কি বাধ্য হয়ে রাস্তার উপর দাঁড় করান।

 
এর মিনিট দশেক পরে আবারও রাস্তার উপর জটলা। ফার্মগেটের পূর্ব পার্শ্বের এই জায়গাটিতে বাস দাঁড় করানোর জন্য আলাদা বে (লেন) থাকলেও কদাচিৎ দু’একটি বাস সেদিকে দাঁড়ায়। সবগুলো বাসই মেইন রোডের উপরেই যাত্রী ওঠা-নামানো করছিলো।
 
দশটায় অফিস আওয়ার হওয়ায় যাত্রীর চাপও খানিকটা বেশি। ফোর লেনের এই সড়কটির দু’টি লেন তখন অপেক্ষমান যাত্রীদের দখলে।   তবে উপচে পড়া ভীড় তা কিন্তু বলা যাবে না। যাত্রীরা অনেকেই সবার আগে উঠতে রাস্তার মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। দাড়ানোর লোকজনদের কারণে অর্ধেক রাস্তাবন্ধ, চালু মাত্র দু’টি লেন।
 
সেই দু’টি লেনের বামেরটিতে তখন গুলিস্তানগামী একটি বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিলো। একই সময়ে আবার সেই বাসটিকে টপকিয়ে পুরো রাস্তা বন্ধ করে যাত্রী ওঠা -নামা শুরু করেন নিউ ভিশন পরিবহনের অপর একটি বাস ( ঢাকা মেট্রো ব ১৪-১১৮৩)। এতে বন্ধ হয়ে যায় পুরো যান চলাচল। খামারবাড়ির দিক থেকে যে গাড়িগুলো সিগন্যাল পার হয়ে সাঁই সাঁই করে কারওয়ান বাজারের দিকে যাচ্ছিলো সেই গাড়িগুলো চাকা মুহুর্তেই থেমে যায়। এবার হানা দিলেন সার্জেন্ট আশরাফ। গাড়িটিকে বাধ্য করলেন বামে তেজগাঁও বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের দিকে সাইড করতে।
 
স্বেচ্ছায় যে সাইড করলেন তা বলা যাবে না। দু’জন কনস্টেবলকে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে হুমকি ধামকি দিতে দেখা গেলো। যখন গাড়ির কাগজপত্র চাইলেন, চালক তার হাতে চারটি কেস সিলিপ ধরিয়ে দিলেন। তারমানে গাড়িটির নামে অলরেডি ৪টি কেস বিদ্যমান। কাগজ চলে গেছে পুলিশের ঘরে। অর্থাৎ মামলা হচ্ছে কিন্তু সংশোধন হচ্ছে না।
 
তাহলে উপায় কি প্রশ্ন ছিল ট্রাফিক সার্জেন্ট আশরাফের কাছে। তিনি উত্তর দিলেন কেন দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ডাবল জরিমানা হয়। পরে জানালেন, রং সাইডে গাড়ি দাঁড় করানোর জন্য ৪’শ টাকা জরিমানা হয়। সেই কেস থাকা অবস্থায় যদি আবার মামলা হয় তাহলে তার জরিমানা হবে ৮’শ টাকা।
 
কিন্তু একজন কোটিপতি গাড়ি মালিকের কাছে এই টাকা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে প্রশ্নে সার্জেন্ট আশরাফ বলেন, আগেতো আরও কম জরিমানা ছিল। এখন বাড়িয়ে ৪শ’ করেছে।
 
ফার্মগেটের উভয় দিকে  দু’টি করে ‘বাস বে’ রয়েছে। কিন্তু সেই বাস বে’তে বাসের দেখা মেলা ভার। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দশটা পর্যন্ত অবস্থান করে হাতে গোনা কয়েকটি বাসকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তাও স্বেচ্ছায় নয়।

প্রতিযোগিতামূলক যাত্রী তুলতে গিয়ে আড়াআঁড়ি করে দাঁড়ানোর কারণে মেইন রাস্তা বন্ধ। সে কারণে বাস বে’তে প্রবেশ করেছে কেউ কেউ। তবে গাজীপুরগামী বিআরটিসির কিছু বাসকে ‘বে’তে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
 
অথচ এই বে তৈরি করা হয়েছে যাতে মেইন রাস্তায় বাস দাঁড় করাতে না হয়। যাত্রীরা যেন সুন্দরভাবে গাড়িতে উঠতে পারেন। আর মেইন রাস্তা যেন সব সময় সচল থাকে। কিন্তু সেই বে পুরোপুরি ফাঁকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে উঠা-নামা করছেন যাত্রীরা।
 
ফার্মগেটের এই পয়েন্টটিতে একজন টিআই, দু’জন অফিসার ও চারজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সামনেই রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করছে বাসগুলো। মাঝে মাঝে দু’একটি বেশি বাড়াবাড়ি করলে মামলা দিচ্ছেন।
 
অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য হাক ছাড়ছেন। কোনটিকে ইশারা দিয়ে চলে যেতে বলছেন। কখনও কখনও কথা না শুনলে বেত উচিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু  এভাবে  সম্ভব নয় বলে খোদ ট্রাফিক পুলিশ ও স্বীকার করলেন।
 
নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে এই রকম ‘বাস বে’ রয়েছে । কিন্তু কখনও বাস সেখানে না দাঁড়িয়ে রাস্তা বন্ধ করে যাত্রী উঠা-নামা করছে।   অনিয়ম এখন  এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যা অনেকটা নিয়মসিদ্ধ হয়ে গেছে। পুলিশকেও আর গা করছে না।   এমনকি খোদ পুলিশের গাড়ির পথরোধ করে যাত্রী ওঠা-নামা করছে। আর এই চাপ গিয়ে পড়ছে রাস্তার উপর। যার রেশ চলছে সারাদিন ধরে।
 
ভোক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রাস্তার উপর আড়াআঁড়ি করে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। নগরীর যানজট কমাতে হলে প্রথমেই ‘বাস বে’কে বাঁচাতে হবে। আদৌ কি ‘বাস বে’ কি বাঁচবে?
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
এসআই/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।