ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শিশু নূরের হাত ঘুরে টাকা ট্রাফিক পুলিশের পকেটে (ভিডিও)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
শিশু নূরের হাত ঘুরে টাকা ট্রাফিক পুলিশের পকেটে (ভিডিও) ছবি: সুমন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঢাকার রাজপথে গাড়ি থামিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে ট্রাফিক পুলিশ-সার্জেন্টদের টাকা নেওয়ার চিত্র প্রতিদিনকার। তবে গাড়ি চালকদের নানা অনিয়মের কারণে নিয়মিত মামলা দেওয়ার চিত্রও রয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে বিভিন্ন সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তাদের তল্লাশির প্রধান টার্গেটে থাকে পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা।  

মূলত গাড়ি আটকানোর পর গাড়ি চালকদের সঙ্গে দফারফা করে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের টাকা নেওয়ার পদ্ধতিও পাল্টেছে। কোনো কোনো স্পটে ট্রাফিক পুলিশরা এখন আর নিজ হাতে টাকা নেয় না। তাদের হয়ে তৃতীয় পক্ষ চালক-হেলপারদের সঙ্গে দফারফা করে।


 
শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) সকালে এমনই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ সিগন্যাল এলাকায়। এখানে গাড়িচালকের কাছ থেকে টাকা নিতে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে নূরে আলম নামে এক শিশুর। মূলত নূরে আলমই সবার সঙ্গে মধ্যস্থতা করে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি থামার পর পর সকাল ১১টার দিকে রামপুরা ব্রিজ সিগন্যালে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন গাড়ি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল তল্লাশি অভিযানে নামে। ট্রাফিক পুলিশদের দু’ভাগের নেতৃত্বে রয়েছে দু’জন সার্জেন্ট।

সার্জেন্ট জোবায়েরের নেতৃত্বে একটি ভাগ বনশ্রীগামী গাড়িগুলো আটকে তল্লাশি করছে। দেখা গেল, এ গ্রুপে প্রধান টার্গেট সিএনজিঅটোরিকশা আর মোটরসাইকেল। সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলগুলো থামিয়ে কাগজপত্র দেখছেন, সব ঠিক থাকলে যেতে দেওয়া হচ্ছে আর সমস্যা হলে মামলা দিতে দেখা গেছে।
 
আরেক ভাগ ব্রিজের উপরে মালিবাগ থেকে বাড্ডার দিকে যাওয়া গাড়িগুলো তল্লাশি করছে সার্জেন্ট শাহেদের নেতৃত্বে। এখানে তাদের প্রধান টার্গেট যাত্রীবাহী বাসগুলো। এ গ্রুপের সঙ্গেই দেখা মিলে ৯-১০ বছর বয়সী শিশু নূরে আলমের।
 
গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখার নাম করে দরকষাকষি করছেন ট্রাফিক পুলিশ কালাম। আর কালামের সঙ্গে শিশু নূরে আলমের যেন গলাগলি সম্পর্ক। খানিক পরেই জড়িয়ে ধরে কথা বলছেন, খুনসুটিতে মেতে উঠছেন। তখনও বোঝা যায়নি আসলে নূরে আলমের কাজ কী? বা তার সঙ্গে ওই শিশুর সম্পর্ক কী?
 
আসল ঘটনা দেখতে বেশিক্ষণ অপেক্ষ‍া করতে হয়নি। গাড়ির কাগজপত্র কালাম হাতে নিচ্ছেন, আর বাসের হেলপার নেমে আসছেন। মাথা নিচু করে দু’জনের মধ্যে কথা শেষ হতেই কালাম দেখিয়ে দিচ্ছেন শিশু নূরে আলমকে। সে একটু দূরে ব্রিজের রেলিংয়ের সঙ্গে পেছন দিক ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। আর বাসের হেলপার তার কাছে গিয়ে হাতে গুজে দিচ্ছেন টাকা। খানিক পরে সেই টাকা নূরে আলমের কাছ থেকে নিয়ে সরাসরি পকেটে পুরছেন কালাম।
 
বাংলানিউজের উপস্থিতি টের পেয়ে কালাম জানতে চান, ‘কী করছেন আপনারা?’ তখন অন্য কাজের কথা বলে তাকে নির্ভয় দেওয়া হয়।
 
এভাবে কিছুক্ষণ লেনদেন চলার পর নূরে আলমকে চলে যেতে বলেন কালাম। তারপর ওই শিশুর সঙ্গে কথা বলে তারা নাম জানা যায়। সে জানায়, মাদারটেক এলাকায় থাকে এবং সে বাসে হেলপার হিসেবে কর্মরত। ‘সবাই তোমাকে চিনে’ এ কথা বলতেই হেসে দেয় শিশু নূরে আলম।
 
১৫-২০ মিনিট পর আবার নূরে আলম যোগ দেয় ট্রাফিক পুলিশ কালামের সঙ্গে। বাসের হেলপার হিসেবে পরিচয় দেওয়া নূরে আলম হয়তো আবারও ট্রাফিকের লেনদেনের হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করবে।

** মালিবাগ-রামপুরা রোডে যত্রতত্র গাড়ি থামানোর হিড়িক
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
পিএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।