ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সড়কে জটলা করে পুলিশের ‘চাঁদাবাজি’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
সড়কে জটলা করে পুলিশের ‘চাঁদাবাজি’ ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার কারওয়ানবাজার। জটলা আর হট্টগোল এখানকার নিত্য ঘটনা।

বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৩ থেকে ১৪ জন ট্রাফিক কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেন। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ২টা এবং ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতি শিফটে তারা দায়িত্ব পালন করেন কাওরানবাজারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে ট্রাফিক কনস্টেবলের প্রধান দায়িত্ব রিকশা ও ভ্যান যেন প্রধান সড়কে ওঠে সমস্যা সৃষ্টি না করে তা তদারকি করা। কিন্তু অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপভ্যান চালকের কাছ থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা নিতে দেখা যায় তাদের অনেককে। তাদেরই একজন তেজগাঁও জোনের ট্রাফিক কনস্টেবল সেকান্দার আলী।

শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেলো কারওয়ান বাজারে।

এ সময় প্রতি অটোরিকশার জন্যে ১০ থেকে ২০ টাকা চাঁদা নিচ্ছিলেন ট্রাফিক কনস্টেবল সেকান্দার। আর পিকআপ ভ্যানের ক্ষেত্রে নিচ্ছিলেন সর্বনিম্ন ২০ টাকা। আরও বেশি টাকা নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন চালক। এজন্যে নিজেই রাস্তায় জটলা সৃষ্টি করেছেন যানজট দূরের দায়িত্বে নিয়োজিত এই পুলিশ সদস্য।

সকালে রাজধানীর কচুক্ষেতের উদ্দেশে অটোরিকশা বোঝাই সবজি নিয়ে রওনা দেবেন চালক মিলন শেখ। তার কাছ থেকেও ১০ টাকা চাঁদা নিয়েছেন কনস্টেবল সেক‍ান্দার। এগিয়ে গেলে এক গাল হেসে মিলন শেখ বললেন, ‘সিএনজিতে (অটোরিকশা) যাত্রী তোলার নিয়ম। মাল (সবজি) নেওয়ার কোনো নিয়ম নাই। তাই পুলিশকে ১০ টাকা দিয়া নিয়ম কইরা নিলাম। ’

চাঁদা দেওয়া যেন কারওয়ান বাজারে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এসব চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই চান সিএনজি অটোরিকশা চালক সুজন মিয়া।

কাওরানবাজার থেকে কালশী পর্যন্ত ২০০ টাকার ভাড়া পেয়েছেন তিনি। অথচ তার কাছ থেকেও ২০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সুজন বলেন, ‘মামা চাঁদা ছাড়া সিএনজির চাকা ঘুরবে না। ২০০ ট্যাকার খ্যাপ মারার আগেই ২০ টাকা নাই। ’

শুধু সুজন-ই নন, থেমে থেমে বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা মাথায় শুক্রবার বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদার টাকা সংগ্রহ করতে দেখা গেছে সেকেন্দারকে।

বাংলানিউজকে কনস্টেবল সেকেন্দার বলেন, ‘এসব সিএনজি অটো রিকশার সব চালক আমাদের পরিচিত। আমরা সবাই ভাই-ভাই। কাউকে জোর করা হচ্ছে ন‍া। কোনো চালককে দেখাতে পারবেন না যে তাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নিচ্ছি। তারা (চালকেরা) খুশি হয়ে যা ইচ্ছা তাই দিচ্ছে। ’

এ বিষয়ে স্থানীয় ভ্যান মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্লিপের মাধ্যমে ১৫ টাকা নেওয়ার নিয়ম। রিকশা ৫ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা কেউ মানে না। তবে কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নিচ্ছে পুলিশ। ’

যোগাযোগ করা হলে কারওয়ানবাজার পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত সিনিয়র সার্জেন্ট আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, কারওয়ান বাজারে অযান্ত্রিক যানবাহনে সড়কে উঠে অনেক সময় জটলা তৈরি করে। এসব জটলা ঠেকাতে শিফট অনুযায়ী ১২ থেকে ১৩ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এসবের মধ্যে কেউ যদি অবৈধ কিছু করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
এমআইএস/টিআই/এমএ
    

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।