ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৬ বছরেও চালু হয়নি রৌমারীর রাবার ড্যাম

মো. আনিছুর রহমান, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৬
৬ বছরেও চালু হয়নি রৌমারীর রাবার ড্যাম ছবি: বাংলানিউজ

রৌমারী (কুড়িগ্রাম): বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠেলাঠেলিতে কাজ শুরুর ছয় বছর পরও এখনো চালু হয়নি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বহুল আলোচিত রাবার ড্যাম প্রকল্পটি।

দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে থাকায় ও দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে রাবার ড্যামটি।


 
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা খেওয়ারচর এলাকার জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০ সালে রাবার ড্যাম প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। সে সময় নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি টাকা।  

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এটি বাস্তবায়ন করে। ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠেলাঠেলিতে মুখ থুবরে পড়ে প্রকল্পটি।

প্রকল্পটির কাজ পায় গোপালগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খন্দকার বিজনেস ইন্টারন্যাশনাল। কাজ চলার একপর্যায়ে নানা অজুহাতে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে দেয়।

উপজেলা শহর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বদিকে যাদুরচর ইউনিয়নের সায়দাবাদ বাজার হলেই খেয়ারচর এলাকা।  

বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রিবিল এলাকায় সড়কে একটি জায়গায় স্লুইচ গেট তৈরি করা হয়েছে। নদীর দুই পাশে বসানো হয়েছে প্রায় এক হাজার সিসি ব্লক। চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৮৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি  সেতু।  

সেতুর নিচে নদীতে ড্যামের রাবার ফুলানোর অভাবে রাবার ড্যামের ব্যাগটি কয়েক জায়গায় ভাঁজ হয়ে নষ্ট হতে বসেছে। এছাড়া প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য বসানো হয়নি সিসি ব্লক। কিন্তু ড্যাম হতে নদীর দুই পারের দুই কিলোমিটার পর্যন্ত  সিসি ব্লক ও রাস্তা নির্মাণ করার কথা ছিল।

এছাড়াও অসমাপ্ত রয়েছে পাম্প ঘর নির্মাণ ও সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও।  

প্রকল্প এলাকা ঘুরে ড্যাম দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কাউকে পাওয়া গেলো না। নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই অফিস ঘরটি দখল করে মোস্তাফা নামের এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তার অভিযোগ, রাবার ড্যামের কারণে তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই জায়গা না থাকায় ওই ঘর দখল করে বাস করছেন তিনি।

উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হক বাংলানিউজকে জানান, ওই প্রকল্পে নতুন করে অতিরিক্ত এক কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নতুন করে টেন্ডার, ঠিকাদারও  নিয়োগ করা হয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারও হয়েছে।  খুব দ্রুত ওই প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

খেওয়ারচর রাবার ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির (পাবসস) সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় সমিতিতে চারশ কৃষক সদস্য রয়েছেন। কিন্তু গত ৬ বছরেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এলাকার প্রায় ১২শ কৃষক ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপ বসিয়ে চাষাবাদ করছেন। এতে ফসল উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে।  

তিনি জানান, প্রকল্পটি চালু হলে কম খরচে বেশি ফসল উৎপাদন, মাছ চাষসহ নানা দিক থেকে লাভবান হবেন এখানকার কৃষক। ফলে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার জোর দাবি এলাকাবাসীর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল হক জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে আড়াই হাজার কৃষক পরিবারের দুই হাজার হেক্টর আবাদি জমি। দূর হবে অনেকের বেকারত্ব।  

তিনি আরো জানান, এলাকায় অগভীর নলকূপের সংখ্যা কমে যাবে। এতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
এসআর‍
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।