ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মিড ডে মিল, সূবর্ণচরে ৯০ স্কুলে দিন বদলের হাওয়া

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৬
মিড ডে মিল, সূবর্ণচরে ৯০ স্কুলে দিন বদলের হাওয়া ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সূবর্ণচর (নোয়াখালী) থেকে ফিরে: সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, নেই দানবীর বা বিত্তবানদের অনুদান।  

তবুও নোয়াখালীর সূবর্ণচর উপজেলার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্বাভাবিক নিয়মে চালু রয়েছে খুদে শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিল (দুপুরের খাবার)।

 

‘দুপুরের খাবার স্কুলে খাব, রোগ মুক্ত জীবন গড়ব’ স্লোগানে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) উদ্যোগে মিড ডে মিল শিশুদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি করেছে।

এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে কোমলমতি শিশুদের মনন ও মেধায়। ফলে কমে গেছে স্কুল পালানোর হার, বাড়ছে পরস্পর সহনশীলতা। সেইসঙ্গে পড়াশোনায় মনোযোগ।

বরাদ্দ ছাড়াই কি করে এসব সামলানো সম্ভব? এ আয়োজনের পেছনের ব্যক্তিটি, সূবর্ণচরে (ইউএনও) মো. হারুন অর রশিদ জানালেন, চেষ্টা থাক‍াতেই এটা সম্ভব হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, ইউএনও হারুন অর রশীদ ২০১৫ সালে যোগদানের পর বিভিন্ন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি দুপুরের খাবার না খাওয়ার সুযোগ থাকায় খুদে শিক্ষার্থীদের দুর্বল হয়ে পড়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেন।

ওই বছরের আগস্ট থেকে উপজেলার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনি মিড ডে মিল চালুর উদ্যোগ নেন।
 
এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় সভা, অভিভাবক ও মা সমাবেশ করেন। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে অভিভাবক ও শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসার বিষয়টি নিশ্চিতে চেষ্টা শুরু করেন। বর্তমানেও তা অব্যাহত রয়েছে।  

এদিকে, মিড ডে মিল কর্মসূচিকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে উপজেলা পর্যায়ে তিন সদস্যের একটি তদারকি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি প্রতিদিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে শিশুদের দুপুরের খাবারের বিষয়টি দেখভাল করেন।

উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন ঘটেছে সব স্কুলেই। ফলে এখন নিত্যদিন সকালে স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদের কাঁধে ব্যাগ আর হাতে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা মায়ের হাতের তৈরি খাবারের বাক্স দেখা যায়।

শিক্ষকরা জানান, প্রতিটি শিশুই শ্রেণিকক্ষে নিজের আসনের পাশেই টিফিন বক্স রাখে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একত্রে বসে খাবার খায়। তবে কোনো শিক্ষার্থী খাবার নিয়ে না আসলে বন্ধুরা তার সঙ্গে নিজের খাবার ভাগাভাগি করে।  

এর মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পরস্পর সহযোগিতার মনোভাব ও সহনশীলতা বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়।

অপরদিকে, মিড ডে মিলে বদলে যেতে শুরু করেছে শিশুদের মানসিকতা ও পড়াশোনা। এখন তারা বিরতির সময় আগের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যাচ্ছে না। বাইরের খোলা খাবার না খাওয়ায় অসুস্থতার হাত থেকেও রক্ষা প‍াচ্ছে তারা।  

সেইসঙ্গে এর মাধ্যমে শিশুদের মননশীলতার বিকাশের পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীলতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বিষয়ে মিড ডে মিলের উদ্যোক্তা ইউএনও হারুন অর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, শিশুরা সময়মতো দুপুরের খাবার না খেতে পারলে তাদের শারীরিক ও মানসিক গঠনে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফুটপাতের বিভিন্ন খাবারের কারণে প্রায়ই তার অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই সুস্থ ও মেধাবী  শিশু তৈরিতে মিড ডে মিলের কোনো বিকল্প নেই।  

তিনি জানান, মিড ডে মিল চালুর পর থেকে বিদ্যালয় পালানোর প্রবণতা কমে প্রায় শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। ঝরে পড়ার শিক্ষার্থীর হারও কমে ১৩ থেকে শতকরা ৪ শতাংশে এসেছে। সেইসঙ্গে পাঠে মনোযোগ বেড়ে শতকরা ৯৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
এসআর‍

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।