ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এক ইলিশ মাঝির, বাকিসব জেলের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৬
এক ইলিশ মাঝির, বাকিসব জেলের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর: যাদের জাল আছে, নৌকা নেই। নৌকা কেনার সামর্থ্য নেই।

এমন সব জেলে এক নৌকায় ৩৫ থেকে ৪৫ জন মিলে দলবেঁধে ইলিশ শিকারে যান। ভাড়া হিসাবে নৌকার মালিককে (মাঝিকে) ধরা পড়া দ্বিতীয় বড় ইলিশটা দিতে হয়। এভাবে প্রত্যেক জেলের কাছ থেকে একটি করে ইলিশ পান মাঝি।

 

এই পন্থায় মাছ ধরতে গেলে জেলে ও মাঝি উভয়ই লাভবান হন। দাদনদারদের কাছে জিম্মি হচ্ছে না জেলেরা। আর মাঝি শুধু নৌকাটি দিয়ে পেয়ে যাচ্ছেন ৩০ থেকে ৪০টি মাছ। সব মিলিয়ে উভয়ই খুশি।

গেল কয়েক বছর জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মেলেনি। এবার লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় জাল ভরে ইলিশ উঠেছে। ভরা প্রজনন মৌসুম শেষ হয়েছে। ফের ওইসব জেলে ঝাকে-ঝাকে ইলিশের প্রত্যাশায় রাত-দিন দলবেঁধে নদীতে শিকারে যাচ্ছেন।

জেলার কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ শিকার করে জেলেরা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন। একের পর এক নৌকা ভিড়াচ্ছে ঘাটে। প্রতি নৌকায় ৪০ জনের মতো জেলে। তাদের প্রত্যেকের হাতে জাল। মাথায় বড় পাতিল ভর্তি ইলিশ। তাদের আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে মাছঘাট। ধুম পড়েছে ইলিশ কেনা-বেচার।

মাছ ঘাটে আসা জেলেরা জানান, তারা মাঝ নদীর ডুবোচর থেকে ইলিশ ধরে ফিরেছেন। তাদের বহন করা নৌকায় প্রায় ৪০ জন জেলে ছিলেন। নিজের নৌকা না থাকায় দলবেঁধে ইলিশ শিকারে গেছেন তারা। দলবেঁধে গেলেও প্রত্যেকে পৃথক জালে ইলিশ ধরেছেন। তাদের জালে ধরা পড়েছে প্রচুর ইলিশ। এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার ইলিশ শিকারে মেঘনার জলে জাল ফেলেন তারা।

জেলে নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ভরা জোয়ারে ডুবোচরে এক গলা পর্যন্ত পানি হয়। ওই জলে তারা জাল পাতেন। তাদের জালে ইলিশ আটকা পড়লে হেঁটে গিয়ে ধরে নিজস্ব পাত্রে রাখেন। যে কারণে স্থানীয় ভাষায় তাদের হাঁটা জেলে বলা হয়।

চর জগবন্ধু এলাকার জেলে হারুন বাংলানিউজকে জানান, মাঝ নদীর ডুবোচরে তারা দলবেঁধে ইলিশ শিকার করেন। এভাবে ইলিশ শিকারে তেমন পুঁজি লাগে না। কেবল জাল হলেই হয়। ৩৫ থেকে ৪০ জন জেলে মিলে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে ইলিশ শিকারে যাই। নদীর বিশাল এলাকা জুড়ে প্রত্যেকে আলাদা-আলাদা জাল ফেলি। ওই জালে ধরা পড়ে রুপালি ইলিশ। প্রত্যেক জেলের ধরা ইলিশের মধ্যে দ্বিতীয় বড় মাছটি নৌকার মালিককে দিতে হয়।

রইজল মাঝি বলেন, দলবেঁধে ইলিশ শিকারে নৌকা ও জ্বালানি খরচ নৌকা মালিকের। ইলিশ ধরা পড়লে দলবেঁধে ইলিশ শিকারে বেশি লাভ। এতে কেবল জাল হলেই হয়। ধরা পড়া এক ইলিশ মাঝির। বাকিসব ইলিশ জেলের।  

জেলার রামগতি কমলনগর রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মেঘনাপাড়ে প্রায় ৬০ হাজার জেলের বসবাস। এদের মধ্যে বেশিরভাগ জেলেই দরিদ্র। নদীতে ইলিশ শিকার করে জীবিকা। গেল কয়েক বছর নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পড়ায় তাদের ধারদেনা করে চলতে হয়েছে। চলতি ইলিশ মৌসুমে নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে জেলেদের অতীতের ধারদেনা শেষ হয়েছে। এখন তারা সঞ্চয়ও করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।