ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কাজ বন্ধ দাপুনিয়া ব্রিজের, যন্ত্রণার বেইলি ব্রিজও মরণফাঁদ!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৬
কাজ বন্ধ দাপুনিয়া ব্রিজের, যন্ত্রণার বেইলি ব্রিজও মরণফাঁদ! ছবি- অনিক খান- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

দাপুনিয়া, ময়মনসিংহ সদর ঘুরে: কথা ছিল সাত মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া সড়কের দাপুনিয়া ব্রিজের। সেই হিসাব কষে এ সড়কে যান চলাচল সচল রাখার জন্য সুতিয়া নদীর ওপর নির্মিত হয়েছিল একটি বেইলি ব্রিজ।

কিন্ত নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে ঢের সময় আগে।  

শুধু অগ্রগতি নেই এ ব্রিজ নির্মাণের! স্থানীয় সরকার দলের প্রভাবশালী নেতারা চাঁদা দাবি করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখে চম্পট দিয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও কাজ না আগানোর কারণে সব চাপ গিয়ে পড়েছে সরু ব্রেইলি ব্রিজে।  

ঝুঁকি তবুও জীবনের প্রয়োজনে এ ব্রিজের ওপর দিয়েই ছুটতে হচ্ছে স্থানীয় দাপুনিয়া, কাতলাসেন, ফুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।  

আবার ব্রিজটি ওয়ানওয়ে হওয়ায় পাশাপাশি দু’টি যান পার হতে পারে না। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট এখানে হয়ে উঠেছে নিয়তি। একটি ব্রিজের কারণে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের ফুলবাড়িয়া উপজেলা হয়ে উঠেছে দুর্গম।  

স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, পুরাতন ব্রিজ ভেঙে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর সুতিয়া নদীর ওপর ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ঢালাই ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দরপত্র অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ২৯ মে।  

কিন্তু গত এক বছরে শুধুমাত্র নতুন ব্রিজের বেজ ঢালাইয়ের কাজ হয়েছে। এরপর থেকেই এমডি ফরিদ উদ্দিন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রেখেছে।  

সরেজমিনে দেখা গেলো, প্রতিদিনের মতো রোববার (০৬ নভেম্বর) সকাল থেকেই এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়। একটি বাস বা ট্রাক বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে পার হলে একজন যাত্রী চলাচলের মতোও জায়গা থাকে না।  

অনেক সময় উঁচু সড়ক থেকে ঢালু বেইলি ব্রিজ পার হওয়ার সময় যানবাহন আটকে যায়। তখনই সৃষ্টি হয় যানজটের।  

দাপুনিয়া বাজার থেকে বাইসাইকেলযোগে কাতলাসেন যাচ্ছিলেন স্থানীয় উজান ঘাগড়ার বাসিন্দা লুৎফুর রহমান। যানজটের কারণে ব্রিজ পার হতে পারছিলেন না।  

বিরক্তি নিয়ে বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্রিজের কাজ ঠিকই শুরু হয়েছিল। কিন্তু সরকার দলের নেতারা চান্দা (চাঁদা) চাইছে। ঠিকাদার রাজি হয়নি। ফলে হাজার হাজার মানুষকে নিত্যদিন দুর্ভোগে রেখে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখে পালিয়েছেন। ’ 

একই রকম কথা জানান এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ফারুক মিয়া (৩৫)। তিনি বলেন, এক বছর ধইরা কাজ বন্ধ। নেতাগরে খিরাজ (ট্যাক্স) দিলে এতোদিনে কাম (কাজ) শেষ হইয়া যাইতো।  

দাপুনিয়া বাজার এলাকার ঝরনা ডেকোরেটরের ব্যবসায়ী আবু রায়হান অভিযোগ করেন, বেইলি ব্রিজটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। চলাচলের সময় পা আটকে যাচ্ছে। ব্রিজটি ৫ টন ওজন ধারণ করতে পারলেও এখান থেকে যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টন ওজনের যানবাহন। ফলে যেকোন সময় ব্রিজটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।  

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বাংলানিউজকে জানান, বর্ষা শুরু হওয়ার কারণে সুতিয়া নদীর তলদেশে পানি বেড়েছিল। এ কারণে ঢালা সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই ঠিকাদার ফের নির্মাণ কাজ শুরু করবেন। প্রভাবশালী নেতাদের চাঁদা দাবির বিষয়টি জানেন না বলে জানান।  

তবে ব্রিজ নির্মাণকারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমডি ফরিদ উদ্দিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শরীফুল ইসলাম জানান, সরকারি দলের নেতারা চাঁদা দাবি করায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সওজের কর্মকর্তাদেরও অপদস্ত করেছিল তারা।  

পরে তাদের সঙ্গে সমঝোতা হলেও বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় আর কাজ হয়নি। আগামী দু’একদিনের মধ্যে পুনরায় কাজ শুরু হয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করা হবে বলেও জানান এ ঠিকাদার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬ 
এমএএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।