ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হাঁকডাক নেই হালুয়াঘাট স্থলবন্দরে, কর্মহীন শ্রমিকরা 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৬
হাঁকডাক নেই হালুয়াঘাট স্থলবন্দরে, কর্মহীন শ্রমিকরা  ছবি: অনিক খান - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) ঘুরে এসে: ডিসেম্বর থেকে জুন। এ ৬ মাস সচল থাকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর।

 বছরের বাকি সময়টা বন্দরে থাকে না শ্রমিক-মজুরদের চিরচেনা হাঁকডাক। বর্ষার কারণে পুরোপুরি বন্ধ থাকে ভারত থেকে কয়লা আমদানি।

কাজ না থাকায় ওই সময়টায় তাদের বেকার থাকতে হয় বলে জানিয়েছেন অনেকে। ফলে নিদারুণ কষ্টে চলে শ্রমিকদের জীবন। তবে শীত দূয়ারে থাকায় শ্রমিকদের মাঝে জ্বলে ওঠেছে আশার আলো।  

শ্রমিকরা বলছেন, কিছু আমদানিকারক এরইমধ্যে পাথর ও কয়লা আমদানি শুরু করে দিয়েছেন। তাই জেগে উঠতে শুরু করেছে বন্দরে শ্রমিকদের হাঁকডাক। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে এ দু’টি স্থলবন্দর পুরোদমে প্রাণ ফিরে পাবে বলেও জানালেন তারা।  

সম্প্রতি সরেজমিনে কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া বন্দর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেলো।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়লা, পাথর ও মসলাসহ ১৭টি পণ্য আমদানি করার উদ্দেশে ১৯৭৯ সালে কড়ইতলী স্থলবন্দর ও ঠিক ১৮ বছর পর গোবরাকুড়া স্থলবন্দর যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ দু’বন্দরে শুধুমাত্র ভারতীয় কয়লা আমদানি শুরু হয়।

দু’টি বন্দরে প্রায় এক হাজার আমদানিকারক ব্যবসা করেন। এ দু’বন্দরে ভারত থেকে প্রতিবছর গাছুয়াপাড়া-কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া সীমান্ত পথে আড়াই থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি হয়।  

কর্মচাঞ্চল্য বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও গাজীপুর, ঢাকা, দিনাজপুর, নওগাঁ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক কয়লা বিকিকিনি হয়। কিন্তু ছয়মাস কোনো কাজ না থাকায় কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করে নতুন নাম লিখিয়েছেন। কারও বা সংসার চলছে ধার-দেনা করে।  

কোনো কাজ না থাকায়  কর্মহীন শ্রমিক-মজুরের সংখ্যা বাড়ছে বলেই জানালেন কয়েকজন শ্রমিক।  

স্থানীয় কড়ইতলী স্থলবন্দরের পাশেই আবু বক্কর ছিদ্দিকের চায়ের দোকান। এ দোকানেই অলস বসে থাকা বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হয়। তাদের একজন মনির এন্টারপ্রাইজের শ্রমিক মো. আলমগীর।  

গালে হাত দিয়ে অসহায়ভাবে বসে থাকা এ শ্রমিক বললেন, ‘অহন তো অফ সিজন। এই সময়ডায় পাথর আমদানি থাকলেও কয়লা পুরাই বন্ধ। এর লাইগ্যা  আমাগোর বেকার বইস্যা থাকতে অইতাছে। ’ 

কর্মহীন শ্রমিক সাইদুল ইসলাম (৩৫), তাঁরা মিয়া (৩০) নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে জানান, শীত মৌসুম ছাড়া শ্রমিকদের হাতে কোনো কাজ থাকে না।  

‘অথচ প্রত্যেকদিনের আয়ের ট্যাকা দিইয়া চলে সংসারের খরচ। এহন চরম দুঃসময় চলতাছে। হাতে কোনো কাজ নাইগা। ’ 

অনেকেই বাইরের জেলায় কাজের খোঁজে বেরিয়েছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় নিজেদের দুরাবস্থার কথাও জানান তারা।  

তবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেলো এ স্থলবন্দরেরই অ্যাসেম্বলি এন্টারপ্রাইজের সামনে। সেখানে বেশ কয়েকটি ট্রাকে কয়লা লোডের কাজ করছেন স্থানীয় লীকুড়া গ্রামের হোসেন আলী, আলামিনসহ জনা পাঁচেক শ্রমিক।  

আলামিন জানান, জ্বালানি কাজে, বিশেষ করে ইটভাটা, কল-কারখানাসহ বিভিন্ন কাজে কয়লার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ছয়মাস ইটভাটা বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পড়েন বিপাকে।  

তার ভাষ্য, ‘প্রতি ট্রাক লোড করলে মজুরি বাবদ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পাওয়া যায়। সময় লাগে সাকুল্যে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। ’

‘কাজ না থাকলে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে মাটি কাটি। এখন সিজন আসায় আবারও এ পেশায় ফিরে এসেছি,’ ট্রাকে কয়লা লোডের কাজের ফাঁকেই বলছিলেন শ্রমিক হোসেন আলী।  

শ্রমিকরা জানালেন, বন্দরের বয়স বাড়লেও তাদের মজুরি বাড়েনি। অথচ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের সমস্যার শেষ নেই। টিকতে না পেরে অনেকেই কাজের জন্য শহরে ছুটছেন।
 
জানতে চাইলে হালুয়াঘাট গোবরাকুড়া স্থল শুল্কবন্দর আমদানিকারক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর বলেন, আর মাত্র দু’সপ্তাহ পরেই বন্দর পুরোমাত্রায় প্রাণ ফিরে পাবে। ফলে শ্রমিকদের বেকার জীবনেরও অবসান ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬ 
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।