ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফেলনা পণ্যে তৈরি হস্তশিল্পে স্বাবলম্বী আগৈলঝাড়ার নারীরা 

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
ফেলনা পণ্যে তৈরি হস্তশিল্পে স্বাবলম্বী আগৈলঝাড়ার নারীরা 

ফেলনা পণ্য দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার নারীরা। এদের অধিকাংশই অসহায় ও দুস্থ।

বরিশাল: ফেলনা পণ্য দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার নারীরা। এদের অধিকাংশই অসহায় ও দুস্থ।

কাগজ, গিফট ব্যাগ, ফটো অ্যালবাম, ফটোফ্রেম, গিফট বক্স, খেলনা, ওয়ালম্যাট, ক্রিসমাস ডেকোরেশন, জুয়োলারি বক্সসহ হাজারো পণ্য তৈরি করছেন তারা। যার উপকরণ কচুরিপানা, পুরনো কাগজ, পাট, কেয়াপাতা, মূলিবাঁশ, শন, বেত আর পাট।  

আগৈলঝাড়া উপজেলায় বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এমসিসি'র (মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি) তত্ত্বাবধানে পাঁচটি হস্তজাত প্রকল্প জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ, বিবর্তন, কেয়াপাম, তরুলতা ও বাগধা এন্টারপ্রাইজ গড়ে উঠেছে। যা ২০০৮ সাল থেকে প্রকৃতি’র প্রডাকশন ইউনিট হিসেবে কাজ করছে।  

সূত্র জানায়, জব ক্রিয়েশন অর্থাৎ গরিব, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, ভূমিহীন ও দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়।

১৯৮৪ সালে আগৈলঝাড়ার জোবারপাড় এলাকায় গড়ে ওঠে জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ নামের প্রকল্পটি। এখানে ডোবা, মজাপুকুর থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে কাগজ তৈরি করা হয়। সেই কাগজ দিয়ে পুতুলবক্স, খেলনাসহ দেড় শতাধিক প্রয়োজনীয় সৌখিন সামগ্রী তৈরি করা হয়। মাত্র তিন লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ৫৫ শতাংশ জমির ওপর এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়।

একই বছর ২৫ শতাংশ জমির ওপর স্থায়ীভাবে বাগধায় ‘বাগধা এন্টারপ্রাইজ’ নামে আরো একটি প্রকল্প চালু করা হয়। যেখানে শন, সুতা, পাটের ব্যাগ, পার্টস, সাইড ব্যাগসহ প্রায় ৩০০ ধরনের সৌখিন সামগ্রী তৈরি করে থাকে লাভের মুখ দেখা প্রতিষ্ঠানটি।

কালুরপারে বিবর্তন নামে আরেকটি প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। শুরু থেকেই কচুরিপানা প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ২০০টিরও বেশি পণ্য তৈরি করা হয়।  

১৯৮৭ সালে বড়মগরা এলাকায় কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তালপাতা, মূলিবাঁশ, কেয়াপাতা ইত্যাদি। এখানে ১০০টিরও বেশি পণ্য তৈরি হয়। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত তরুলতায় পুরনো শাড়ি, ঘাস, পাতা দিয়ে পণ্য তৈরি হয়।  

কালুর পাড়ে বিবর্তন হ্যান্ডমেড পেপার প্রজেক্টের ম্যানেজার সজল কৃষ্ণ দত্ত জানান, তাদের প্রজেক্টে পণ্যের মূল উপাদান কচুরীপানা, পাশাপাশি মানুষের ব্যবহার অযোগ্য ঘাস, বাঁশ, পাট, পুরনো কাগজসহ বিভিন্ন ফেলনা উপকরণ। তাদের উৎপাদিত সবকিছুই সাদামাটা ও টেকসই। যার অধিকাংশ তৈরি হয় প্রাকৃতিকভাবে।  

তিনি আরো জানান, তাদের পণ্য আমেরিকা, জাপান, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসহ ২০টি দেশে রপ্তানি হয়। যা থেকে বছরে আয় হয় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা।  
ঢাকার আসাদগেটে সোর্স নামে একটি শো-রুমে রয়েছে তাদের। সেখানে দেশে কদর রয়েছে এমন পণ্য বিক্রি হয়। পণ্য কিনতে কিংবা অর্ডার দিতে সেখানেই যেতে হবে ক্রেতাদের।

বর্তমানে এ প্রকল্পে একজন নারী শ্রমিক (প্রডিউসর) আট ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাসে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করছেন। এছাড়া প্রতিবছর তাদের প্রকল্পের অনুকূলে কাজের লভ্যাংশ শ্রমিকদেরও দেওয়া হয়।

বিবর্তনে ২২ বছর ধরে কর্মরত নারী শ্রমিক (প্রডিউসর) রিণা দেওরী জানান, একসময় ছিল বিবর্তনে কাজ করে পরিবারের অভাব অনটন দূর করেছেন তিনি। এখন তার ছেলেমেয়ে ঢাকায় পড়ালেখা করছে। মেয়ে নার্সিং এ পড়ছে আর ছেলে কলেজে।  

তিনি বলেন, এখানে কাজ করার মধ্যে অন্যরকম আনন্দও রয়েছে। আমার হাতে ফেলনা জিনিস দিয়ে সৌখিন পণ্য তৈরি হচ্ছে- এটা ভাবতেই ভালো লাগে।

শিল্পী বাড়ৈই নামে অপর এক শ্রমিক বলেন, অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েকে নিয়ে একসময় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতাম। আজ শত শত অসহায় নারীর মতো আমিও এখানে কাজ করে তিনবেলা খেতে পারছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
এমএস/এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।