ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বরাদ্দ থাকে পড়ে, মানুষ মরে ধুকে ধুকে

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
বরাদ্দ থাকে পড়ে, মানুষ মরে ধুকে ধুকে

রাস্তার কোথাও ইট বিছিয়ে দেওয়া, কোথাও খোয়া ফেলে গর্ত ভরাটের চেষ্টা করা হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় খোয়া-ইট-পাথর কিছুই নেই, ঠিক যেনো মেঠো রাস্তা। বাস-ট্রাকগুলো এমনভাবে চলছে মনে হবে-এই বুঝি উল্টে যাবে।

সাতক্ষীরা থেকে: রাস্তার কোথাও ইট বিছিয়ে দেওয়া, কোথাও খোয়া ফেলে গর্ত ভরাটের চেষ্টা করা হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় খোয়া-ইট-পাথর কিছুই নেই, ঠিক যেনো মেঠো রাস্তা।

বাস-ট্রাকগুলো এমনভাবে চলছে মনে হবে-এই বুঝি উল্টে যাবে।

সড়কটি আসলে পাকা, না কাঁচা, নাকি হেরিংবন এক কথায় বলা কঠিন। প্রতিনিয়ত জোড়াতালি দিতে দিতে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।  

বলছিলাম সাতক্ষীরা শহরের প্রধান সড়কের কথা। মঙ্গলবারও (১৫ নভেম্বর) সড়ক ও জনপথের (সওজ) লোকজনকে জর্জকোর্টের সামনে জোড়াতালি দিতে দেখা গেলো।

অন্যান্য সড়কের অবস্থা আরও করুণ। বাঙ্গালের মোড় রইচপুর সড়কটি কাঁচা রাস্তা না-কি কখনও পাকা ছিলো বুঝে ওঠা কঠিন। মনে হবে পাকা করার জন্য সবে মাত্র বালি ফেলা হয়েছে রাস্তাটিতে। সড়কটি সারাদিন ধুলায় অন্ধকার হয়ে থাকে! 

এই সড়কের মুখে যুবলীগের একটি পরিত্যাক্ত সাইনবোর্ড দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। দুই সেন্টিমিটার পুরো ধুলার আবরণ পড়েছে লেখার উপর।  

যে কারণে লেখাটাই আর পড়া যাচ্ছে না। রাস্তার দুই পাশ্বের ঘরবাড়ির অবস্থাও প্রায় একই।  
রাস্তা-ঘাটের এই বেহাল অবস্থা নিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতির মুখোমুখি হয় বাংলানিউজ টিম। এতে উঠে এসেছে আরও ভয়াবহ চিত্র।

মেয়র জানিয়েছেন, পৌরসভার সাড়ে ৩১ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ২৫/২৬ কিলোমিটার রাস্তার নব্বই শতাংশই খারাপ। রাস্তা ভালো রয়েছে ৫ কিলোমিটার।  

পৌরসভার যে আয়, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতেই শেষ হয়ে যায় তা। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।  

প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভাটির আগে ১৬ লাখ টাকা হলেই মাসিক বেতন পরিশোধ হয়ে যেতো। সরকার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করায় এখন মাসে ৩৪ লাখ টাকা প্রয়োজন হয় তা পরিশোধ করতে।  

এই বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জাপানি সংস্থা কেএফডব্লিউ জলবায়ু তহবিল থেকে ২০১৪ সালে ১৫ মিলিয়ন ইউরো অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সেই অর্থ এখনও ছাড় করা হয়নি। নানা রকম জটিলতায় আটকে আছে। এ বরাদ্দ পাওয়া গেলে কোনো জটিলতা থাকতো না।

‘সবচেয়ে শঙ্কার হচ্ছে সহায়তার এই অর্থ চার বছরের মধ্যে খরচ করতে হবে। না হলে ফেরত যাবে। এতে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। কিন্তু কে শোনে কার কথা। স্থানীয় সংসদ সদস্যও একাধিকবার দেন দরবার করেছেন কিন্তু খুব একটা কাজ হয়নি। ’

তিনি বলেন, কাজটার সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবম‍ূর্তিও জড়িত। আগামী ২১ নভেম্বর ইআরডিতে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দাতা সংস্থা, ইআরডি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের লোকজন অংশ নেবে।  

‘ওই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সাতক্ষীরার লোকজন। ওই বরাদ্দ পেলে সাতক্ষীরা পৌরসভা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। ’

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান মেয়র তাজকিন আহমেদ।
তিনি বলেন, জলবায়ু তহবিল থেকে মোট ৮০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কিস্তির অর্থ খরচ হলে পরবর্তী অর্থ ছাড় করা হবে। এ কারণেও এই অর্থ দ্রুত ছাড় করা প্রয়োজন।

শহরের রাস্তাঘাট অপরিচ্ছন্ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সিডর-আইলার আগে এ পৌরসভার জনসংখ্যা ছিলো এক লাখের নিচে। কিন্তু ওই দুর্যোগে গৃহহীন অনেক লোক গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছে। এখন শহরের লোক সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে।  

‘এই বাড়তি লোকের চাপ নেওয়ার মতো অবস্থা নেই সাতক্ষীরা পৌরসভার। বাড়তি লোকের কর্মসংস্থান অন্যান্য বিষয়ে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পৌরসভা। পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণের যন্ত্রপাতির ঘাটতিও বিপাকে ফেলে দিয়েছে,’ বলেন তিনি।  

তবে তাজকিন আহমেদ চিশতী স্বপ্ন দেখেন এ পৌরসভা এক সময় প্রথম কাতারে জায়গা করে নেবে। তখন মানুষ উদাহরণ দেবে সাতক্ষীরার। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা শহরটি হয়ে ওঠবে স্বাস্থ্যকর।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
এসআই/এমএ

**
সাতক্ষীরা ডিসির সামান্যের বিশালতা
**সাতক্ষীরার সুন্দরবন এখনও অনাবিষ্কৃত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।