ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পরিচালকের তৎপরতায় বদলে গেছে মমেক হাসপাতালের চিত্র

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
পরিচালকের তৎপরতায় বদলে গেছে মমেক হাসপাতালের চিত্র ছবি- অনিক খান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এক বছর আগেও হাসপাতালের গাইনি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে পা ফেলতেই নাকে এসে লাগতো দুর্গন্ধ। কিন্তু এখন পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের তৎপরতায় আঁশটে গন্ধের মাত্রা কমে এসেছে।

ময়মনসিংহ: এক বছর আগেও হাসপাতালের গাইনি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে পা ফেলতেই নাকে এসে লাগতো দুর্গন্ধ। কিন্তু এখন পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের তৎপরতায় আঁশটে গন্ধের মাত্রা কমে এসেছে।

বছর খানেক আগেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ভাগ্যে জুটতো না মানসম্মত খাবার। খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের পকেটে চলে যেত বরাদ্দকৃত টাকার বেশিরভাগ অংশ।

কিন্তু এখন আর ডালের সঙ্গে বেশি পানি মেশানো হয় না। এক টুকরো মাংসকেও কয়েক টুকরো করা হয় না। তিন বেলাই ভর্তিকৃত রোগীদের দেয়া হচ্ছে ভালো খাবার। দুর্নীতিবাজ চক্র সিন্ডিকেট করে হাসপাতালের ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি করে দিতো। আর এখন হাসপাতালের প্রতিটি দেয়ালে ওষুধ সরবরাহের কথা জানান দেয়া হয়।

অপারেশনের জন্য এখন আর বাইরে থেকে হাজার হাজার টাকার ওষুধ কিনে আনতে হয় না। হাসপাতালেই এখন ওষুধের নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে। পরিবর্তনের এসব খণ্ড খণ্ড চিত্র ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের।

এক সময় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল এ হাসপাতাল। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলাচ্ছে। রোগী বান্ধব হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন এসব পরিবর্তনের কারিগর। যোগদানের প্রায় এক বছরের মাথায় তার নেতৃত্বে তলানিতে গিয়ে ঠেকা এ হাসপাতালের ইমেজ পুনরুদ্ধার হচ্ছে।

সুবিধাভোগী বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও ব্যক্তিগত দৃঢ়তা, সাহস ও মূল্যবোধ দিয়ে এ হাসপাতালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা অনিয়মের শেকল ভাঙার চেষ্টা করছেন তিনি। তার কড়া নজরদারি, কঠোর তদারকির ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও ফিরে এসেছে।

হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া গ্রামের চম্পা বেগম। প্রায় দু’বছর আগেও একবার ভর্তি ছিলেন একই ওয়ার্ডে। অতীত ও বর্তমান পরিবেশের পার্থক্য দাঁড় করাতে গিয়ে তিনি বলেন, এক সময় এ ওয়ার্ডে গন্ধে টেকা যেতো না।

আঁশটে গন্ধ আর রক্ত ভরে থাকতো ওয়ার্ডে। এখন ওয়ার্ডে অনেকটাই পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরে এসেছে। তবে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা না বাড়ার কারণে বেশিরভাগ রোগীকে এখনো মেঝেতেই গাদাগাদি করে থাকতে হয় বলে জানান এ রোগী।
বছরখানেক আগে হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে যোগদান করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন। তার সময়ই হাসপাতালে প্রথমবারের মতো নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড চালু হয়েছে। এখান থেকে এ পর্যন্ত ৫৫ জন রোগীর মস্তিষ্কে জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে।

দালালদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন হাসপাতালের রোগীরা। এখন দালাল সিন্ডিকেটের দৌড় কমেছে, জানান হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর স্বজন।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালে অবাঞ্ছিত লোকজন ও বহিরাগতদের ঠেকাতে এটেনডেন্স ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এক্সরে বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। ৩৬ লাখ টাকা খরচ করে দু’টি অত্যাধুনিক আলট্রাসাউন্ড মেশিন কেনা হয়েছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্র জানায়, হাসপাতালে আগে প্রতিদিন ১ হাজার ৭’শ থেকে ১ হাজার ৮’শ জন রোগী ভর্তি থাকতো। এখন সেবার মান বাড়ার ফলে গড়ে ২ হাজার ৪’শ রোগী ভর্তি থাকেন। আউটডোরেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। সততা, দক্ষতা ও আন্তরিক কর্মপ্রয়াস দিয়ে গোটা হাসপাতালে শক্তিশালী টিম ওয়ার্ক স্থাপনেরও চেষ্টা করছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন।

এসব বিষয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমার একার পক্ষে সব পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এখনো হাসপাতালে ক্যাথল্যাব, ডায়ালাইসিস মেশিন নেই। এম আর মেশিন ও সিটি স্ক্যান মেশিন ১০ বছরের পুরানো। রেডিও থেরাপি মেশিন নিয়ে লাল ফিতার খেলা চলছেই।

তিনি বলেন, এ হাসপাতালকে একটি সম্পূর্ণ সেবা বান্ধব হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
এমএএএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।