ঢাকা, শনিবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভাঙাড়ি ব্যবসার আড়ালে চোরাকারবার!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
ভাঙাড়ি ব্যবসার আড়ালে চোরাকারবার! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রনি ও পুতুলি। বয়স ১৫-১৬ বছর। নাটোরের সিংড়া উপজেলার জামতলীর বাসিন্দা তারা। জীবিকার খোঁজে বগুড়া শহরে আসা। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে তাদের বেঁচে থাকার লড়াই।

বগুড়া: রনি ও পুতুলি। বয়স ১৫-১৬ বছর।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার জামতলীর বাসিন্দা তারা। জীবিকার খোঁজে বগুড়া শহরে আসা। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে তাদের বেঁচে থাকার লড়াই।

 

শহরের আনাচে-কানাচে, অলি-গলিতে, বাসা-বাড়ির কোনায় ও ময়লার ভাগাড়ে জীবিকা অন্বেষণ করে তারা। সেসব স্থান থেকে কুড়িয়ে আনে নানা ভাঙাড়ি সামগ্রী। এরপর তাদের গন্তব্য সোজা ভাঙাড়ির দোকান। যা সংগ্রহ হয় তা বিক্রি করে দিনে দেড়শ’ থেকে দু’শ’ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে চলে তাদের জীবন।
 
তাদের মতো অসংখ্য শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষ ভাঙাড়ি সামগ্রী কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীরা এসব অভাবী মানুষদের নিজের মতো ব্যবহার করেন।

এ পেশায় রয়েছেন অসংখ্য নেশাগ্রস্ত নারী-পুরুষ ও পেশাদার চোর। তারাও কোনো না কোনো ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। চুরির মালামাল নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যবসায়ীর কাছে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করেন তারা। নেশাগ্রস্তদেরও একইভাবে ব্যবহার করা হয়। এভাবেই ভাঙাড়ি ব্যবসার আড়ালে চলে চোরাকারবারও!
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের হাড্ডিপট্টি, ধোলাইখাল মার্কেট, শাপলা মার্কেট, মাটিডালি, শাকপালা, সাবগ্রাম, ঝোপগাড়ি, ভবেরবাজার, বারপুর, বনানী, এরুলিয়া, জয়পুরপাড়া, পীরগঞ্জ, কাটনারপাড়সহ শহর ও শহরতলীর আশেপাশের এলাকায় শতাধিক ভাঙাড়ির দোকান রয়েছে।
 
প্লাস্টিক ও কাচের বোতল, টিন, তামা, পিতল, জুতা, কাগজ, বই, খাতা, পেপার, চেয়ার, আলমারি, টিভি, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক পাখা, মোটর, লোহার রডসহ বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক, বৈদ্যুতিক তার, কাগজ, স্টিলের সামগ্রী দোকানগুলোতে কেনা-বেচা হয়।
 
এসব সামগ্রী কিনতে বা বিক্রি করতে কোনো ক্যাশ মেমো লাগে না। তাই পণ্যটি চোরাই নাকি কুড়িয়ে আনা তা বোঝার উপায় নেই।
 
সুমন, হাসান ও মনি কুড়িয়ে আনা বিভিন্ন সামগ্রী গোছগাছ করছিলো। অনেকটা চুপিসারে তারা বাংলানিউজকে বলে, ‘অনেক মহাজন চোর ও নেশাখোর পালেন। তাদের কাছ থেকে কম দামে জিনিস কেনেন। তবে অনেক ভালো মহাজনও রয়েছেন’।
‘এটি খুব জটিল ব্যবসা। ভালো-মন্দ বুঝতে অনেক সময় লাগবে’ বলে কৌশলে চলে যায় তারা।
 
ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী শিউলি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি ৩৬ আইটেমের ব্যবসা। পোলাপানের মাল কেনার সময় নাই, চোরের মাল কিনবো কখন? চুরির ব্যবসা করি না। এটা পছন্দও করি না। চোরের সঙ্গে আমাদের ব্যবসার কোনো সম্পর্ক নাই’।
 
সুজন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম ও জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ব্যবসার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মালামাল কেনা হয়। সেক্ষেত্রে চোরাই নাকি কুড়িয়ে আনা মাল সেটা দাম-দরেই বোঝা যায়।

তবে তারা কখনো চুরির মালামাল কেনেন না বলে দাবি করেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট দিনগত রাতে কাহালু উপজেলায় ডাকাত দল ‘এ রহমান মেটাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে’ হানা দিয়ে নৈশপ্রহরী আব্দুল জব্বারকে হত্যা করে প্রতিষ্ঠানের মালামাল লুটে নেয়। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  

একই উপজেলায় গত ৯ সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে নলকূপের নৈশপ্রহরী আবুল কালামকে হত্যা করে ট্রান্সফরমারের বিপুল পরিমাণ তার চুরি করে চোরেরা। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দু’জন ছিলেন ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী। তাদের হেফাজতে থাকা ডাকাতি ও চুরি যাওয়া সিংহভাগ মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এমবিএইচ/জেডএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।