ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভাইয়ের স্কুলের বেতন দেওয়া হলো না আঁখির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
ভাইয়ের স্কুলের বেতন দেওয়া হলো না আঁখির

সংসারের তীব্র অভাব-অনটন দূর করতে মাস দুয়েক আগে আশুলিয়ার কালার ম্যাক্স বিডি লিমিটেড কারখানায় কাজে যোগ দেয় আঁখি (১৪)।

আশুলিয়া (সাভার): সংসারের তীব্র অভাব-অনটন দূর করতে মাস দুয়েক আগে আশুলিয়ার কালার ম্যাক্স বিডি লিমিটেড কারখানায় কাজে যোগ দেয় আঁখি (১৪)।

নিজের পড়াশোনা না হলেও স্বপ্ন ছিল ছোট ভাইটিকে অন্তত পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ কর‍ার।

পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে ‍আনার।

কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না কিশোরী আঁখির। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) কালার ম্যাক্স কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।

আগুনে পুড়ে আঁখির সঙ্গে মারা গেছে তার স্বপ্নও। সেইসঙ্গে শেষ হয়ে গেছে তাকে ঘিরে পরিবারের সদস্যদের স্বপ্নও।

আঁখি রংপুরের মিঠাপুকুর থানার বিক্রমপুর গ্রামের আশরাফুলের মেয়ে। বাবা ও মায়ের সঙ্গে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার হাজি চাঁন মিয়ার বাড়িতে বাসা ভাড়া বসবাস করতো। তার একমাত্র ছোট ভাই নাইম গ্রামের বাড়িতে থেকে স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে জিরাবোতে আঁখিদের ভাড়া বাসায় গিয়ে ঘরটি তালাবদ্ধ দেখা যায়।

প্রতিবেশীরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার খবর শুনেই আঁখির দিনমজুর বাবা ও মা পাগলের মতো ছুটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে বুধবার ভোরে আঁখির মৃত্যু হলেও তারা এখনো ফিরে আসেননি।

আঁখির বাবা আশরাফুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, দুই মাস আগে গ্রামের বাড়ি থেকে আঁখিকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসেন তারা। পরিবারে টানাপোড়েনের কারণে ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ ও সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে কালার ম্যাক্স বিডি লিমিডেট কারখানায় কাজ নেয় আঁখি।

মঙ্গলবার দুপুরের খাবার খেয়ে কাজে যাওয়ার আগে বলে যায়, আগামী ১২ ডিসেম্বর চলতি মাসের বেতনের টাকা তুলে বাড়িতে ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা ও খরচের টাক‍া পাঠাবে। কিন্তু আগুনে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আঁখির বাবা।

আঁখির স্বজন লায়লা আক্তার জানান, এভাবে কারখানায় আগুনে পুড়ে আঁখির মৃত্যু তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

তিনি অভিযোগ করেন, ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজের জন্য সবসময় নারী ও শিশু শ্রমিকদের বেছে নিত। সেখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই বললে চলে। কর্তৃপক্ষ সচেতন হলে আঁখির মতো শ্রমিকদের আগুনে পুড়ে মরতে হতো না।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কালার ম্যাক্স বিডি কারখানায় আগুন লাগে। এতে ৩৯ শ্রমিক আহত হন। এদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ ২০ জনকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ও বাকিদের সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বুধবার ভোরে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আঁখির।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।