ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এখনও বাজে বাদ্য, তবে ডাক কম...

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৬
এখনও বাজে বাদ্য, তবে ডাক কম... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দেড় ফুট চওড়া মাইকের মুখের মতো যন্ত্রটি ঘাড়ে নিয়ে একটি অংশ মুখে পুড়ে ফুঁ দিচ্ছেন শাকিল। তার মুখের বাতাস পেচানো চিকন পাইপের ভেতর দিয়ে আঙুলের আলিঙ্গনে পাচ্ছে সুরের ব্যঞ্জনা- ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়...’।

ঢাকা: দেড় ফুট চওড়া মাইকের মুখের মতো যন্ত্রটি ঘাড়ে নিয়ে একটি অংশ মুখে পুড়ে ফুঁ দিচ্ছেন শাকিল। তার মুখের বাতাস পেচানো চিকন পাইপের ভেতর দিয়ে আঙুলের আলিঙ্গনে পাচ্ছে সুরের ব্যঞ্জনা- ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়...’।

সুরের তালে তালে পর পর বেজে চলেছে আরও কয়েকটি গান। নানা সুরের ব্যঞ্জনা আর তাদের রঙিন পোশাক-পরিচ্ছদে আশেপাশের মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রে বাদক দল।

বিয়ের অনুষ্ঠান, সন্তান জন্মের খুশি, সুন্নতে খ‍ৎনা, আকিকাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং স্কুল-কলেজসহ রাষ্ট্রীয় নানা অনুষ্ঠানে এক সময় দেখা গেলেও এখন খুব একটা পাওয়া যায় না তাদের।
 
গত বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) একটি বিজয় ৠালিতে রাজধানীতে দেখা পাওয়া যায় একটি বাদক দলের।   মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় ৠালিতে অংশ নিতে রাজধানীর আলুবাজারের হাজী ওসমান গণি রোড থেকে এসেছিলেন তারা।
 
বিজয়ের মাসে তাদের বাদ্যের তালে তালে বাজছিল স্বাধীনতার গান, বিজয়ের সুর।

 

‘বাংলাদেশ ব্যান্ড পার্টি’ নামের দলটির সদস্যরা জানান, মাথাপিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এ দলে কাজ করেন তারা। তাদেরই একজন অ্যালফোনিয়াম বাজাচ্ছিলেন শাকিল।
 
ষাট বছর বয়সী হালকা শরীরের শাকিলকে ফুঁ দিতে যেন শরীরের সমস্ত শক্তির প্রয়োগ করতে হচ্ছিলো। তিনি বলেন, ‘এখন আর আগের মতো ডাক পাই না। আগে মাঝে মধ্যেই ডাক পড়তো, এখন সপ্তাহে এক-দু’দিন’।

তিনি বলেন, ‘স্কুল লাইফ থেকেই শখ ছিল। পরে ব্যান্ড দলে ঢুকে যাই। তবে আধুনিক যন্ত্রের কারণে শেষ বয়সে এসে আয়-উপার্জন নিয়ে বেশ চিন্তাই হয়’।

নয়জনের দলে অ্যালফোনিয়াম ছাড়াও সাইড ড্রাম, বেইজ ড্রাম, টেনর ড্রাম, করতাল, মারগেজ, কর্নেট, ঝাঝা ও টেমবুরিতে বাজছিল বিজয়ের সুর।
 
এর মধ্যে সাইড ড্রাম বাজাচ্ছিলেন বাসুদেব। প্রায় ২৫ বছর ধরে ব্যান্ড দলের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি।  

স্বাধীতার আগে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসে এখন বাংলাদেশের নাগরিক। বাদ্যযন্ত্র বাজানোই তার নেশা-পেশা।
 
বাসুদেব বলেন, ‘আগে বাড়ি বাড়ি ডাক পড়তো। এখন ক্যাসেট, মোবাইলে সঙ্গীত এসে যাওয়ায় কদর কমে গেছে’।      
 
তিনি বলেন, আলু বাজারে বেশ কয়েকটি ব্যান্ড দল রয়েছে এখনও। ঐতিহ্য হিসেবে পুরান ঢাকার অনেক পরিবার থেকে ডাক পড়ে তাদের। তবে উৎসবের কিছু অনুষ্ঠানে ডাক এলেও আগের মতো নয়।
 
বাংলাদেশ ব্যান্ড পার্টির সত্ত্বাধিকারী মো. ইব্রাহীম মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখন আর কাজ নেই, এর চাহিদা নষ্ট হয়ে গেছে। স্টাফরা সিনজি চালান, ডাক পেলে আসেন। তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে লাভ থাকে না’।
 
‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই, কেউ শিখতে চান না, নতুন করে শেখার ইচ্ছাও নেই’।
 
তবে বাদ্যদল নিয়ে অনুষ্ঠান হলে বাংলার ঐতিহ্য টিকে থাকার পাশাপাশি বাদকদের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করেন ইব্রাহীম।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।