ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পিতাকে দেয়া কথা রাখতেই ৫০ বছর কামারের পেশায়

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
পিতাকে দেয়া কথা রাখতেই ৫০ বছর কামারের পেশায় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কষ্টের কাম হইলেও বড় আনন্দ পাই, দাদায় করত, বাপে করত, আমার পোলারাও করে, পেটও চলে পিঠও বাঁচে, সংসারে খুব একটা অভাব নাই, পোলারা এহন কাম করা শিখছে, বাপ দাদার নাম রাখতেই ৫০ বছর ধইরা এই কাম কইরা যাইতেছি...।

ঢাকা: কষ্টের কাম হইলেও বড় আনন্দ পাই, দাদায় করত, বাপে করত, আমার পোলারাও করে, পেটও চলে পিঠও বাঁচে, সংসারে খুব একটা অভাব নাই, পোলারা এহন কাম করা শিখছে, বাপ দাদার নাম রাখতেই ৫০ বছর ধইরা এই কাম কইরা যাইতেছি...।

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে একটি কামারশালা।

হাপর দিয়ে কয়লার আগুনকে উস্কে দিয়ে খুব সুক্ষ্মভাবে দা, বাটি বানানোর কাজ করছিলেন ৬৫ বছর বয়সী হাফেজ আলী। কাজ করতে করতে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

হাফেজ আলী বাংলানিউজকে বলেন, বাপে গরীব ছিলো। লেখাপড়া করতে পারি নাই। নিজের তেমন কোনো টাকা পয়সা ছিলো না তাই পোলাগোরে লেখাপড়া করাইতে পারি নাই। কামারের কাজ শিখাইছি।

তিনি বলেন, লেখাপড়া করতে না পারায় দুঃখ থাকলেও এই কাজ করে খুব আনন্দ পান। |

তিনি বলেন, মারা যাওয়ার সময় (বাজু কামার) বাপেরে কথা দিছিলাম। তাই এই কাজ ছাড়তে পারি নাই।

বাবার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কামারের পেশায় মানুষ আসতে চায় না। এই পেশায় কোনো দাম নাই মানুষের কাছে। আমারে কথা দে তুই আর তোর পোলারা এই কাম ছাড়বি না। সেই থেকেই এই পেশায়।

হাফেজের বড় ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন ও ছোট ছেলে চাঁন মিয়াও কামারের কাজ করেন। কড়াইল বস্তিতেই মোয়াজ্জেমের একটি কামারশালা আছে। সেখানে দুই ভাই মিলে তারা কাজ করেন। এছাড়া চাঁন মিয়া বাবা হাফেজকেও এই কাজে সহযোগিতা করে থাকে।
মোয়াজ্জেম বাংলানিউজকে বলেন, তিনি লেখাপড়া জানেন না। বাবার কাছ থেকে ছোট বেলায় এই কাজ শিখেছেন। এখন এই কাজ করেই তিনি সংসার চালান।

হতাশা প্রকাশ করে মোয়াজ্জেম বলেন, সংসারের বিভিন্ন কাজে কামারের তৈরি দা, বটি, ছুরি, কোদাল, কাচি, চাপাতি মানুষের প্রয়োজনীয় হলেও এই পেশায় যারা কাজ করে তাদের খুব একটা মূল্যায়ন নাই। সবাই অনেক ছোট চোখে দেখে। মানুষই মনে করে না।
কণ্ঠ ভারী করে মোযাজ্জেম বলেন, আমি কাম কইরা খাই। সৎভাবে ইনকাম করি। তাই কে কি মনে করল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
 
তিনি বলেন, এই কাজ আমাদের দেশের ঐতিহ্য। কামারের কাজ একটি শিল্প। এই কাজ সবাই পারে না। অনেক পরিশ্রম। মানুষের অবহেলার কারণে এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

অন্য কাজ করার ইচ্ছে আছে আপনার? এমন প্রশ্নের জবাবে মোয়াজ্জেম বলেন, অন্যকাজ শিখি নাই। এই কাজই করে খাইতে চাই। আমার দাদাও (বাজু কামার) এই কাজ করত। কেমন ইনকাম হয়, জিজ্ঞাসা করতেই মোয়াজ্জেম বলেন আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ভালো রাখছে।

কামার শিল্পের বিষয়ে চাঁন মিয়া বলেন, কামারের কাজ একটি শিল্প আমার ভালো লাগে। এই কাজ করে আনন্দ পাই। এটি সৃষ্টিশীল কাজ। কোনো কিছু তৈরি করাতে অনেক আনন্দ থাকে। আমি এই পেশায় থেকে যেতে চাই।

কামার হাফেজের বাড়ি শেরপুরে। নিজ এলাকায় ৮ বছর কামারের কাজ করেছেন তিনি। বাড়িতে তার কোনো হালের জমি নাই। ভিটেবাড়ি অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। এই কামারের কাজ করেই তার সংসার চলে।

পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন।   দুই ছেলে ৪ মেয়ে। মেয়েদের সবাইকে পাত্রস্থ করেছেন তিনি।

হাফেজ আলীর বাবর নাম বাজু কামার। তার মায়ের নাম হাওয়া বিবি।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
আরএটি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।