ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফেরা হয়নি ১১ বন্ধুর!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
ফেরা হয়নি ১১ বন্ধুর! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে অবস্থিত কলাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। খেলার মাঠ পেরিয়ে বিদ্যালয়ের মূল ফটকে ঢুকতেই চোখে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

কেরানীগঞ্জ, ঢাকা: কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে অবস্থিত কলাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। খেলার মাঠ পেরিয়ে বিদ্যালয়ের মূল ফটকে ঢুকতেই চোখে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

কাছে গিয়ে বোঝা গেলো এটি আসলে শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি নাম ফলক।

নাম ফলকে শ্বেতপাথরে খোদাই করে কালো রঙে লেখা রয়েছে, ‘ঊনিশ শ একাত্তর এর স্বাধীনতা সংগ্রামে এতদঞ্চলের এগারোটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও আরো নাম না জানা শহীদদের স্মরণে। ’

যার নিচেই লেখা রয়েছে ১১ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম। তারা হলেন, আ.ফ.ম শাহাবুদ্দিন (বাবুল), মুহম্মদ আবদুস সালাম, মুহম্মদ শাহ্জাহান, মুহম্মদ নজরুল ইসলাম, মুহম্মদ শাহাদাৎ হোসেন, মুহম্মদ আবুল হোসেন বাদল, মুহম্মদ নাসির উদ্দিন, আব্দুল কাদের, কাজি মুহম্মদ নাজিম উদ্দিন, মুহম্মদ হারুন-আর-রশীদ (মিন্টু) ও মুহম্মদ আহসান। পাশেই রয়েছে আরো একটি উদ্বোধনী ফলক। যাতে লেখা রয়েছে, ‘এই মাটি শহীদের রক্তে করি ম্লান, এই মাটি এই তীর্থের গৌরব মহান। মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী কলাতিয়া’র ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি মিনার। উদ্বোধন করেন বেগম সুফিয়া কামাল। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮২। ’
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ওই ১১ জনের একজন কাজীকান্দি এলাকার কাজি মুহম্মদ নাজিমউদ্দিন। কথা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজি মুহম্মদ নাজিমউদ্দিনের ছোট ভাই কাজী শাহজ উদ্দিন মিন্টুর সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালে নাজিম উদ্দিন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তো। দেশে মুক্তিযুদ্ধ লেগে গেলে আমার ভাইসহ ওরা ১১ জন বন্ধু মিলে আব্দুল হাই নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওরা ১১ জনই কলাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো। এ বিষয়টি জেনে আমিও তাদের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে চাই। আমাকে না নেওয়ার জন্য বাড়ির সবার অগোচরে সে তার বন্ধুদের সঙ্গে পালিয়ে যায়। বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে সে আমার কাছে একটি চিঠি লিখে যায়। চিঠিতে লেখা ছিলো, ‘মিন্টু, দেশের এ অবস্থায় দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে আমি ভারত যেতে বাধ্য হলাম। মাকে দেখে রাখিস। দেশে আসলে দেখা হবে। ’  

মিন্টু বলেন, যুদ্ধচলাকালীন সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে আমার ভাই ও ওর বন্ধুরা  ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। পাকিস্তানি হানাদাররা তাদেরকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ভাইয়ের এ খবর শুনে রাজাকারের ভয়ে বাড়িতে শব্দ করে কাঁদতেও পারিনি। অন্যের মুখে ভাইয়ের শহীদের কথা বিশ্বাস করতে পারেনি আমাদের পরিবারের কেউ। যুদ্ধ শেষে অনেকদিন আমার মা বাবা ও আমরা ভাইয়ের আসার অপেক্ষার প্রহর গুনেছি। কিন্তু আর ফিরে আসেনি ওরা ১১ জন!

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।