ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কেরানীগঞ্জের অরগ্যানিক সবজি চাষি রাজু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
কেরানীগঞ্জের অরগ্যানিক  সবজি চাষি রাজু ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের জন্য কেরানীগঞ্জ উপজেলার ইস্পাহানি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়ছেন শাহিদুল ইসলাম রাজু। একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন তিনি।

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের জন্য কেরানীগঞ্জ উপজেলার ইস্পাহানি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়ছেন শাহিদুল ইসলাম রাজু। একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন তিনি।

তবে এসব কিছু ছাপিয়ে রাজুর বড় পরিচয় তিনি একজন অরগ্যানিক সবজি চাষি। লেখাপড়ার পাশাপাশি চাষাবাদ করেন রাজু। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে নিজের জমিতে চাষাবাদ করছেন তিনি। বড় ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক চিকৎসকের পরামর্শে অরগ্যানিক উপায়ে বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী হন রাজু।

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন রাজু।

তিনি বলেন, আমার বাবা কৃষি কাজ করতেন। ২০০০ সালে তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এরপর কিডনির সমস্যাও দেখা দেয় তার। একপর্যায়ে কিডনি সমস্যার জন্য বাবাকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। তারপরও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এরপর আমার বড় ভাই আব্দুল ওহাব বিদেশ থেকে দেশে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভাইয়াকে চিকিৎসার জন্য ৮৩ নয়া পল্টনের ন্যাচারোপ্যাথি সেন্টারে নিয়ে যাই। সেখানে ডা. শহীদ আহমেদ ভাইয়ার চিকিৎসা করেন। তবে তার চিকিৎসা ব্যবস্থা অন্যান্য চিকিৎসকদের মতো নয়, কিছুটা ভিন্ন। তার প্রথম এবং প্রধান ওষুধ বিষমুক্ত খাবার খাওয়া। সেসময় ডা. শহীদ অরগ্যানিক উপায়ে সবজি চাষের প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি করেন। প্রয়োজনে অল্প পরিসরে নিজেদের খাওয়ার জন্য অরগ্যানিক উপায়ে চাষাবাদ শুরু করতে বলেন তিনি।

পরে তার পরামর্শে ধামরাই উপজেলার মো. আলী নামে এক কৃষকের কাছে হাতে কলমে অরগ্যানিক উপায়ে চাষাবাদের ধারণা নেই। এরপর একে একে বিভিন্ন জায়গা থেকে শিখে চাষাবাদ শুরু করি। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বারি) এর কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন আমাকে বেশ সহায়তা করেন।

চাষাবাদ শুরুর প্রথম দিকে বেশ হিমসিম খেতে হয়েছে। একটি নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করা প্রথমে বেশ কষ্টকর ব্যাপার ছিল। আগের তুলনায় এখন অনেক কম খরচে চাষ করছি। গাছ, মাটি, ফুল ও ফল সব কিছুই ভালোভাবে প্রাকৃতিক নিয়মে বেড়ে উঠছে। সার, কীটনাশক, ভিটামিন ও ছত্রাকনাশক বাড়িতেই তৈরি করি, যোগ করেন রাজু।

তার তিন একর জমি রয়েছে। প্রথমে এক একর জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ জমিতেই তিনি চাষাবাদ করছেন। মূলা, লাল শাক, ডাটা, পাট শাক, শসা, লাউ, বরবটি, করলা, টমেটো, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা ও আলু চাষ করা হয় তার জমিতে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আয়ও করছেন বেশ ভালো।
 
তিনি বলেন, জমিতে প্রথমে শুকনো গোবর ও পরে তরল সার দেওয়া হয়। তরল সারও নিজেই তৈরি করি। তরল সার তৈরিতে প্রয়োজন ১০ কেজি গোবর, চার কেজি চুনা, এক কেজি বেসন ও দু’মুঠো মাটি। সব একসঙ্গে মিশিয়ে তরল সার তৈরি করা হয়। যা সকাল-বিকেল নেড়ে ওলট-পালট করতে হয়। এতে দু’দিনেই এ মিশ্রণ তরল সারে রূপান্তরিত হবে। এর তিন লিটার মিশ্রণ ১০ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে জমিতে দিতে হয়। এ মিশ্রণ এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার না করলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হতে থাকে। এ সার জমিতে ব্যবহার করলে জমির অনুজীব সক্রিয় হয় এবং দীর্ঘদিন জমিতে চাষাবাদ করা যায়।

রাজু আরো বলেন, নিম পাতা, আকন্দ পাতাসহ বেশ কয়েক ধরনের পাতা দিয়ে কীটনাশক তৈরি করা হয়।
এ পদ্ধতিতে ফলন একটু কম হলেও পুষ্টিগুণ থাকে অনেক বেশি। তাই বিষমুক্ত সবজির চাহিদাও বেশি। তার ক্ষেতের সবজি সপ্তাহে দু’বার রাজধানীর মোহম্মদপুর ও পল্টনে পাঠানো হয়। চাহিদা বেশি থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফখরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, বাজারে যেসব সবজি কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশিরভাগ সবজিতেই রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ফরমালিনসহ ক্ষতিকর নানা পদার্থ মিশ্রিত থাকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে উপজেলার যারা অরগ্যানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন তাদের তালিকা করে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।

তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
বিএসকে/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।