ঢাকা, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

প্লেনের ককপিটে রোমাঞ্চকর আকাশ ভ্রমণ (ভিডিও)

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
প্লেনের ককপিটে রোমাঞ্চকর আকাশ ভ্রমণ (ভিডিও) প্লেনের ককপিটে রোমাঞ্চকর আকাশ ভ্রমণ / ছবি-বাংলানিউজ

ককপিটের বোর্ডে রেগুলেটরে নোজ ডাউন করে দেন ক্যাপ্টেন মালেক। দ্রুত মাটি থেকে আকাশে উড়তে থাকা এয়ারক্রাফটের উচ্চতা কমতে থাকে।

যশোর: ককপিটের বোর্ডে রেগুলেটরে নোজ ডাউন করে দেন ক্যাপ্টেন মালেক। দ্রুত মাটি থেকে আকাশে উড়তে থাকা এয়ারক্রাফটের উচ্চতা কমতে থাকে।



তিন হাজার ফিটের বেশি উচ্চতার স্কেল দেখতে দেখতেই ২ হাজারের নিচে নেমে আসে। ডান-বামের জানালা দিয়ে রানওয়ে খুঁজতে থাকেন দুই ক্যাপ্টেন। ঘন কুয়াশায় দেখা যাচ্ছিল না যশোর বিমানবন্দরের রানওয়ে। এখানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই ল্যান্ডিং করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে টেক অফ করে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ এর এয়ারক্রাফট। যাত্রীর আসনে বসে প্লেনের ওঠা-নামা দেখা, আর ককপিটে পাইলটদের পেছনে বসে একের পর এক যান্ত্রিক কর্মকাণ্ড অবলোকন এক নয়। পাইলটদের কাছে বিষয়টা ডাল-ভাত হলেও একজন যাত্রীর জন্য এয়ারক্রাফটের ককপিটে বসে ভ্রমণ রোমাঞ্চকর।

ককপিটের স্টার্ট বাটনে চাপ দেয়ার আগেই অন্তত অর্ধশত বিষয় চেক করে নিতে হয়। কো-পাইলট ককপিটের চেকলিস্ট দেখে একের পর এক যান্ত্রিক পদ্ধতিগুলোর নাম বলতে থাকেন, আর ক্যাপ্টেন সেগুলোর অবস্থান জানাতে থাকেন। পাইলটের নির্দেশে কিছু সুইচ চাপ দিচ্ছিলেন কো-পাইলটও। স্টিয়ারিংয়ে মধ্যে একটি প্লেটের উপর ককপিট রাইটিং প্যাডে কিছু নোট তোলেন তিনি।

রানওয়েতে চলতে শুরু করে প্লেন। ককপিটের স্টিয়ারিং চাকার জন্য নয়। পাইলটদের হাতের পার্শ্বেই অর্ধগোলাকার একটি গোলক দিয়েই চাকার নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়।
প্লেনের ককপিটে রোমাঞ্চকর আকাশ ভ্রমণ
রানওয়েতে চলাকালীনও চেকলিস্টের বিষয়গুলো যাচাই করা হয়। পেছনে প্যাসেঞ্জার বোর্ড থেকে ভেসে আসছিল ক্রুদের সতর্কতা নির্দেশ। মিনিট পার হওয়ার আগেই ক্রুদেরও নিজেদের আসনে বসার নির্দেশ দেন পাইলট। বাইরের তাপমাত্রা আর যশোরে ওই মুহূর্তের তাপমাত্রা কতো, জানিয়ে দেন তিনি। আওয়াজ বাড়তে থাকে, সিটবেল্ট বেঁধে নেন ক্যাপ্টেনরা। পাইলটদের সিটগুলো এগিয়ে যায় সামনে, স্টিয়ারিংগুলো কাছে চলে আসে।

প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে রানওয়েতে ছুটতে থাকে যানটি। কানে ভারি হেডফোন চাপিয়ে এবার মাইক্রোফোনে পরস্পরের কথা চালিয়ে যান। ছোট টুলগুলো সম্পর্কে এবার দ্রুত জানাতে থাকেন একে অপরকে। দক্ষ ক্যাপ্টেন খুব সহজভাবেই প্লেনটিকে ভাসিয়ে তুললেন আকাশে। রাডারে প্লেনটির অবস্থান দেখে নিচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন। উচ্চতার স্কেল লাফিয়ে বাড়তে থাকে। নোজ আপ করে দেন ক্যাপ্টেন। ককপিট থেকে মাটি দেখা যায় না সহজে, বরং প্লেনের নাক উঁচু হওয়াতে আকাশের পানেই উদ্ধত থাকে। এর মধ্যেও চলতে থাকে চেকিং।

সিটবেল্ট খোলার সংকেত অন করে দিলেন ক্যাপ্টেন। বোর্ডে সকালের খাবার পরিবেশন শুরু হয়ে যায়। স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে প্লেনের নাক দক্ষিণে ঘুরিয়ে দেন পাইলট।

মেঘ কেটে উপরে উঠতে থাকে এয়ারক্রাফট। হালকা ঝাকুনি অনুভূত হয় ড্যাশে। এবার প্লেনের নাকের সঙ্গে বডিও সোজা হয়। নিচে তখন মেঘের ভেলা।

কানাডার বিখ্যাত বোমবারডায়ার কোম্পানি দীর্ঘদিনের রেল ব্যবসার অভিজ্ঞতার পর ১৯৮৬ সালে প্রথম এয়ারক্রাফট তৈরি করে। ২০০০ সালের দিকে বাজারে আনে জনপ্রিয় ড্যাস। যাত্রী পরিবহনের কাজে দ্রুত দুনিয়াজুড়ে জনপ্রিয়তা পায় ড্যাস।

ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার করছে বোমবারডায়ারের ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০। যা ঘণ্টায় ৬৬৭ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। সাধারণত এ প্লেনে ৭০ থেকে ৮০টি আসন হয়। সবচেয়ে দ্রুতগামী যাত্রীবাহী প্লেনের মধ্যে একটি এই ড্যাস।

ঢাকা থেকে যশোর মাত্র ২৫ মিনিটের যাত্রা। তবে কুয়াশার কারণে ল্যান্ডিংয়ে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানান ক্যাপ্টেন মালেক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩২ হাজার মিটার উচ্চতায় যানটি রয়েছে বলে জানান তিনি।

দ্রুত আবারো সব আনুষাঙ্গিক যন্ত্র চেক করে নেওয়া হয়। রাডার বরাবর প্লেনের অবস্থান তখন। ল্যান্ডিংয়ের জন্য আবারো সিট বেল্ট বেঁধে নেন পাইলটরা। বোর্ডেও সিটবেল্ট বাঁধার সংকেত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মাটির সঙ্গে যোগাযোগ করে রানওয়ের অবস্থান জেনে নেয়া হয়।

দ্রুত নিচে নামতে থাকে এয়ারক্রাফট। মিনিট খানেকের মধ্যে মিটার স্কেলে উচ্চতা ২ হাজারের নিচে নেমে আসে। দুই পাইলটই খুঁজতে থাকেন রানওয়ে। অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন মালেক কুয়াশার দিকে তাকিয়েই বললেন, আমরা রানওয়ে বরাবর রয়েছি।

স্কেলে উচ্চতা দ্রুত হাজারের নিচে নেমে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দৃশ্যমান হয় রানওয়ে। লিস্টের সঙ্গে ল্যান্ডিংয়ের সব প্রস্তুতি চেক করে নেয়া হয়। বডির নিচ থেকে বের হতে থাকে চাকা। সতর্কতার সঙ্গে প্রায় ঝাঁকিমুক্ত ভাবেই যশোরের রানওয়ে ছোঁয় ইউএস বাংলার বিএস-১২১ ফ্লাইট।

প্লেনের ককপিটে রোমাঞ্চকর আকাশ ভ্রমণ
ল্যান্ডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে চেক করা হতে থাকে লিস্ট। ক্যাপ্টেন মালেক বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই অটোমেটিক পদ্ধতিতে ল্যান্ডিং করা হয়। যেখানে সিস্টেম নিজ থেকেই ল্যান্ডিং করে। তবে বাংলাদেশে ম্যানুয়ালি ল্যান্ডিং করতে হয় বাধ্যতামূলক।

তিনি আরও বলেন, ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফটে অটোল্যান্ডিংসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। এটি বোয়িংয়ের চেয়েও দ্রুতগামী এবং যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
এমএন/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।