ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বগুড়ায় মহাসড়কের উপর ধানের অবৈধ হাট

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
বগুড়ায় মহাসড়কের উপর ধানের অবৈধ হাট মহাসড়কে ধানের অবৈধ হাট। ছবি: আরিফ জাহান

অন্যতম ‘ডেথস্পট’ শেরুয়া বটতলা। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের এই স্থান লাগোয়া দক্ষিণে একটি বাঁক। উত্তরে পরপর আরো দু’টো বড় বাঁক। বাঁকগুলো মরণ ফাঁদ হিসেবে পরিচিত। প্রায় দশ বছর আগে এ স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান একই পরিবারের ৬ সদস্য।

শেরপুর (বগুড়া) ঘুরে: অন্যতম ‘ডেথস্পট’ শেরুয়া বটতলা। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের এই স্থান লাগোয়া দক্ষিণে একটি বাঁক।

উত্তরে পরপর আরো দু’টো বড় বাঁক। বাঁকগুলো মরণ ফাঁদ হিসেবে পরিচিত। প্রায় দশ বছর আগে এ স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান একই পরিবারের ৬ সদস্য।
 
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সদর থেকে মহাসড়ক হয়ে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে এই স্থানটি। সময়ের ব্যবধানে স্থানটি ধান-চালের ব্যবসা কেন্দ্রিক স্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। গড়ে তোলা হয় বিপুল সংখ্যক বড় ধরনের মিল-চাতাল।
 
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মহাসড়ক ঘেঁষে বসান অবৈধ ধানের হাট। স্থানের অভাবে হাট চলে আসে মহাসড়কের উপর। বেঁচা-কেনাও চলে মহাসড়কের উপরই।  
 
ধান বহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ও হাটে আসা বিক্রেতা-ক্রেতাসহ সাধারণ মানুষকে দেখলে দূর-পাল্লা এবং স্থানীয় রুটে চলাচলকারী গাড়ির চালক হার্ড ব্রেক কষে বসেন। ব্রেক মিস বা গাড়িতে ক্রটি ধরা দিলেই ঘটে যায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
মহাসড়কের উপর ‍অবৈধ ধানের হাট
 
প্রায় ২০বছর ধরে মহাসড়কে বসছে অবৈধ এ হাট। ঘটছে ছোট থেকে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনা। দুঘটনায় ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। আহত হচ্ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। কিন্তু দুর্ঘটনারোধে মহাসড়ক থেকে হাট সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে মহাসড়কের অবৈধ হাটে চলছে ধানের কারবার।
 
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের উপর বসানো এই অবৈধ হাটে সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য ওঠে আসে।
 
সপ্তাহের রোববার, মঙ্গলবার ও শুক্রবার ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শেরুয়া বটতলায় ধানের অবৈধ হাট বসে। ভোর থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক ও ব্যাপারীরা এখানে ধান নিয়ে আসেন।
 
মহাসড়ক ঘেঁষে ধানভর্তি যানবাহনগুলো রাখা হয়। আবার বস্তা নামিয়ে সারিবদ্দভাবে রাখা হয় সড়কের উপর। হাট চলাকালীন সময় পর্যন্ত মহাসড়ক ঘিরে প্রচণ্ড ভীড় দেখা যায়। হাটে আসা বিক্রেতা-ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ মহাসড়কের ওপর এবং ঘেঁষে এলোমেলোভাবে চলাফেরা করেন।
 
এছাড়া মহাসড়কের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার। দু’পাশে ঘিরে গড়ে ওঠা স্থায়ী-অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অনেক। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়কের ওপর ও দু’পাশে দিয়ে মানুষ গিজগিজ করে।
মহাসড়কে অবৈধ ধানের হাট
 এখান থেকে স্থানীয় বিভিন্ন রুটে বিপুল সংখ্যক সিএনজি চালিক অটোরিকশা, ব্যাটারি ও প্যাডেল চালিত রিকশা, ভ্যান চলাচল করে। ইচ্ছে মাফিক চালকরা মহাসড়ক ঘেঁষে বা ওপরে গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী ওঠা-নামা করান। এসব কারণে এ স্পটে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। কখনো কখনো ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ হাটের প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার উত্তরে মির্জাপুর হাট। এই হাটের ইজারাদার জোরপূর্বক বাড়তিহারে খাঁজনা নিতেন। এ কারণে ১৯৯৬ সালের দিকে শেরুয়া বটতলায় খাঁজনামুক্ত অবৈধ হাট বসানো হয়। কয়েক বছরের মাথায় এ হাটেও খাঁজনা আদায় শুরু হয়। যা বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে।
 
খাঁজনা আদায়কারী রেজাউল করিম ও প্রদীপ বাংলানিউজকে বলেন, মহাজন (নাম বলেননি) নিয়মানুযায়ী হাট ডেকে নিয়েছেন। সে হিসেবে আমরা খাঁজনা আদায় করছি যোগ করেন তারা।
মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন যারা
 
মহাসড়কে হাট বসানোয় দুর্ঘটনা ঘটছে স্বীকার করে দুই আদায়কারী জানান, মহাসড়ক ফোর লেন হবে। তখন হাট আপনা আপনি অন্যত্র সরে যাবে।
 
জেসার, আব্দুল আজিজ, জেল হক, আব্দুল মতিনসহ একাধিক ধান বিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, নানা কারণে এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। অন্যতম কারণ ধানের হাট। হাটের জন্য দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন অনেকেই।    

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম সরোয়ার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, হাটটি সম্পূর্ণ অবৈধ। মহাসড়কের উপর বা পাশে হাট বসানোর কোন সুযোগ নেই। হাটটি উচ্ছেদের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে সাড়া পেলেই এ হাট উচ্ছেদ করা হবে।

বিকেলে বগুড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এমবিএইচ/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।