ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘প্রধানমন্ত্রী মায়ের ব্যথা বোঝেন, তপুর মা হিসেবে আমি গর্বিত’

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
‘প্রধানমন্ত্রী মায়ের ব্যথা বোঝেন, তপুর মা হিসেবে আমি গর্বিত’ কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপুর মা জোবেদা খাতুন

জোবেদা খাতুনের (৬৫) বুক খালি হয়েছে প্রায় ৫ মাস আগে। তার কনিষ্ঠ সন্তান জহিরুল ইসলাম তপু (২৫) মারা গেছেন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায়। পুলিশে চাকরি করতেন তপু। বুক পেতে রুখে দিয়েছিলেন সেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা।

ময়মনসিংহ: জোবেদা খাতুনের (৬৫) বুক খালি হয়েছে প্রায় ৫ মাস আগে। তার কনিষ্ঠ সন্তান জহিরুল ইসলাম তপু (২৫) মারা গেছেন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায়।

পুলিশে চাকরি করতেন তপু। বুক পেতে রুখে দিয়েছিলেন সেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা।

এরপর থেকেই কান্নাই সম্বল ছিল যার সেই জোবেদা খাতুনকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, দেশের জন্য ছেলে তপু আত্মত্যাগ করায় বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আর্থিক অনুদান হিসেবে তার হাতে ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

জীবন সায়াহ্নে অনুদান হিসেবে টাকা পাওয়ার চেয়েও এ বয়োবৃদ্ধা বেশি শান্তি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উষ্ণতায়। প্রধানমন্ত্রী ছেলেহারা এক মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন। এসব বিষয় ভাবতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন জোবেদা খাতুন।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭ টায় ঢাকা থেকে বাংলানিউজের সঙ্গে মোবাইলে আলাপচারিতায় সেই কথাই তুলে ধরেন তিনি।

বলছিলেন, ‘তপুর বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং পুলিশ সদস্য। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। বার বার পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

আমার ছেলে তপুও নিশ্চিত মৃত্যুপুরীর হাত থেকে শোলাকিয়াকে সেদিন রক্ষা করেছিল। আমি চিরতরে ছেলেকে হারিয়েছি। দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই আমার ছেলে মারা গেছেন। তার আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি মোটেও।

প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমার কান্না দেখে মমতার আদরে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন’ ভারী কন্ঠে উচ্চারণ এ বৃদ্ধার।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটু থেমে আবারো বলতে শুরু করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন মায়ের ব্যথা বোঝেন। স্বজন হারানোর বেদনা তিনি অনুভব করেন।   পুলিশ কনস্টেবল তপুর মা হিসেবে আমি গর্বিত। ’  

জহিরুল ইসলাম তপুর বাবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদও ছিলেন পুলিশ সদস্য। ছেলেকে শিখিয়েছিলেন দেশপ্রেমের মন্ত্র। আর তাই পুলিশের চাকরির মাত্র ৫ বছরের মাথায় জীবনের ইতি টানতে হয়েছে তাকে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা আনতে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের দশমাইল ইছাইল ভাটিপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে মা’র সঙ্গে বের হন প্রয়াত তপুর বড় বোন দিলারা বেগমও (৪৫)।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন পুলিশ কনস্টেবলের মা’কে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন এটা অনেক মর্যাদার। আমার মা ছেলে হারানোর শোক ভুলতে পারবে না ঠিকই কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে সম্মান তাকে দিয়েছে এটার জন্য আমাদের গোটা পরিবার গর্বিত এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ। ’

তপুর পরিবার ছাড়াও গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে জঙ্গি হামলায় নিহত আরো তিন পুলিশের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক অনুদানের চেক বাবদ মোট ৯ সদস্যকে ৫০ লাখ টাকার অনুদানের চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া চলতি বছরের ৭ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তপুর বাড়িতে গিয়ে তার মা’র হাতে ৫০ হাজার টাকা অনুদান তুলে দেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম। ওই সময় স্থানীয় নির্মাণাধীন ভাটিপাড়া সড়কটিও তপুর নামে নামকরণের ও কবর পাকাকরণের ঘোষণা দেন এসপি।

জানতে চাইলে ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজিব বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় ভাটিপাড়া সড়কের জহিরুল ইসলাম তপুর নামে নামকরণ উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় পাস হয়েছে। শিগগির এ সড়কের উদ্বোধন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এমএএএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।