ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাথর ভাঙ্গার শব্দে স্বপ্ন বুনন পদ্মায়

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
পাথর ভাঙ্গার শব্দে স্বপ্ন বুনন পদ্মায় পাথর ভাঙ্গার শব্দে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া অংশে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়া, ছবি: দীপু মালাকার।

‘আগে মনে করতাম নিজের জন্যই কাজ করি। এখন ভাবি দেশের জন্য কাজ করি।’ কান পাতলেই শোনা যায় শ্রমিকের হাতুরি ঠক ঠক আওয়ায়। এ যে পদ্মার বুকে স্বপ্ন বোনার শব্দ। পাথর ভাঙ্গার শব্দের তালে নিজেকে সেই স্বপ্নবোনার কাজে নিয়োজিত করেছেন টাঙ্গাইলের মুক্তার হোসেন।

পদ্মাসেতু প্রকল্প ঘুরে: ‘আগে মনে করতাম নিজের জন্যই কাজ করি। এখন ভাবি দেশের জন্য কাজ করি।

’ কান পাতলেই শোনা যায় শ্রমিকের হাতুরি ঠক ঠক আওয়ায়। এ যে পদ্মার বুকে স্বপ্ন বোনার শব্দ। পাথর ভাঙ্গার শব্দের তালে নিজেকে সেই স্বপ্নবোনার কাজে নিয়োজিত করেছেন টাঙ্গাইলের মুক্তার হোসেন।

শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা। পদ্মার মাওয়া পয়েন্টে সেতু প্রকল্পের শ্রমিক মুক্তার একমনে কাজ করে চলেছেন। কোনো দিকে খেয়াল নেই তার।

টাঙ্গাইলের মুক্তার ছাড়াও মাওয়া এলাকার বরকত, আরমানিটোলার বাধনসহ এখানে সেখানে  কাজ করছেন হাজার হাজার শ্রমিক। ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরিঘাট যাওয়ার পথে চৌরাস্তা গেলেই চোখে পড়বে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ।

ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত উপেক্ষা করেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়া এখন এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।

পদ্মার পাড়ে সেতু নির্মাণ কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা, ছবি: দীপু মালাকারসকাল ১০টায় ইট ভাঙার যন্ত্রের গড়গড় শব্দ ও শ্রমিকের দৌড়ঝাঁপ। চলছে বড় বড় মিক্সচার মেশিন। পাশে নানা কথার ফাঁকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সাব-এসিটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হুমায়ূন কবির আবেগ না সামলেই বলে ফেলেন, ‘যেনো পদ্মার পাড়ে কান পাতলেই এখন শোনা যায় শ্রমিকের হাতুরি ঠক ঠক আওয়াজ। এ যে পদ্মার বুকে স্বপ্ন বোনার শব্দ। ’

মূল সেতুর শুরুটা হবে মাওয়া ফেরিঘাট থেকে। এখান থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরের শিমুলিয়া ঘাটের মাঝখানে কুমারভোগ গ্রামে নদীর পারে ডেরা গেড়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

পানিতে সাদা রংয়ের উঁচু ক্রেন, যা দিয়ে সরানো হবে স্প্যান, ছবি: দীপু মালাকারবিশাল এই মাঠ ঘিরে কর্মকর্তা-শ্রমিকদের আবাসনসহ অন্য অবকাঠামো। মাঠ পেরিয়ে নদীর পারে ভিড়েছে কয়েকটি বার্জ। এতে রয়েছে বড় বড় কয়েকটি ক্রেন। এগুলো দিয়েই মাঠ থেকে সেতুর সরঞ্জাম ওঠানো-নামানো হচ্ছে।
 
মাওয়া মাওয়া ঘাট থেকে নদী পার হওয়ার সময় দেখা গেছে, শরীয়তপুরের জাজিরা ও মাদারীপুরের শিবচরেও চলছে নির্মাণ কাজের তোড়জোড়। শিবচরের কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট থেকে সামনে এগিয়ে সড়কের বাঁ পাশে গড়ে উঠেছে ঠিকাদার, পরামর্শক ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের বাসস্থান। বিশাল এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাথর-বালুর স্তূপ। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন-যন্ত্র চলছে দিন-রাত।

শ্রমিকের হাতে তৈরি হচ্ছে পদ্মাসেতু, ছবি : দীপু মালাকারশ্রমিক মুক্তার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কাজ করতে ভালোই লাগে। কষ্ট লাগে না। মনে বড় সুখ পাই। এই সুখ কাউরে বোঝানো যায় না। আগে মনে হইতো নিজের জন্য কাজ করি। এখন মনে হয় দেশের জন্য কাজ করি। দেশের জন্য কিছু করতে পারেননি। নিজের টাকায় গড়া পদ্মা সেতুর কাজ করতে পারছি এটাই বড় কথা ’

লোহার দু’টি পাত জোড়া দিচ্ছিলেন বাধন ও বরকত নামের দুই শ্রমিক। তারা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আগে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। সেখানে যে টাকা বেতন পেতাম এখন তার চেয়ে কম পাই। কিন্তু তাতে কোনো কষ্ট নাই। কারণ দেশের জন্য কাজ করছি। আমরা নিজেদের আগ্রহ থেকেই এখানে কাজ করতে এসছি। ’

পদ্মার সেতুর কাজ সম্পর্কে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, ‘পদ্মার সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত পদ্মা সেতু শুধু সড়ক সেতু নয়, নির্মাণ হবে রেলপথ। ’

এছাড়াও গ্যাস পাইপ লাইন এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও থাকবে সেতুতে। দুই তলা ব্রিজের ওপর দিয়ে যাবে গাড়ি আর সেতুর নিচের লেভেলে থাকবে ট্রেনলাইন।

কাজে মগ্ন শ্রমিকরা

এছাড়া ৩ মিটার পরিধির একেকটি পাইল ১২২ মিটার পদ্মার তলদেশে গিয়ে থামছে। ছয়টি পাইল ঘিরে দাঁড়িয়ে যাবে একটি পিলার। যে পিলারের উপর স্প্যান বসালেই হয়ে যাবে স্বপ্নের সেতু। এখন পিলার গড়ে তোলার জন্য চলছে পাইল বসানো।

২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশের দক্ষিণ জনপদকে সড়কপথে সরাসরি রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে প্রকল্পের মূল সেতুর নির্মাণ কাজও উদ্বোধন করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এমএমকে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad