ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বপ্ন সেতুর আলিঙ্গনে!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
স্বপ্ন সেতুর আলিঙ্গনে! নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু, ছবি: দীপু মালাকার

সড়কবাতি, গাড়ির হেডলাইট ও দোকানের সামনে লাগানো ডিজিটাল ব্যানারের আলো  কুয়াশার ফাঁকে জ্বলজ্বল করছে। সারা শহর তখনও ঘুমে। দু-একজন শীতে জবুথবু হয়ে চাদর মুড়িয়ে কর্মস্থলে রওনা দিয়েছেন।
 

পদ্মা সেতু প্রকল্প ঘুরে: সড়কবাতি, গাড়ির হেডলাইট ও দোকানের সামনে লাগানো ডিজিটাল ব্যানারের আলো কুয়াশার ফাঁকে জ্বলজ্বল করছে। সারা শহর তখনও ঘুমে।

দু-একজন শীতে জবুথবু হয়ে চাদর মুড়িয়ে কর্মস্থলে রওনা দিয়েছেন। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এমনই হিম শীতকে সঙ্গে নিয়ে গন্তব্য শুরু হয় দেশের অহংকার-গর্বের ‘পদ্মা সেতু’র নির্মাণ কাজ দেখতে।

রাজধানীতে শীতের প্রকোপ যেমন-তেমন, তবে গাড়ি যতই ঢাকা ছেড়ে এগোয় ততই শীত বাড়ছিলো। কুয়াশায় ঢাকা পথ। তারই মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলা। যাত্রা পথ যতই কমে আসছিল, ততই ভিতরে-ভিতরে এক ধরনের চাপা উত্তেজনার সঞ্চার হতে থাকে। মাওয়া চৌ-রাস্তায় পৌঁছালে চোখে পড়ে পদ্মাসেতুর নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ। স্প্যান, পাইল, পিলার, গার্ডার নির্মাণে ইঞ্জিনিয়ার, টেকনেশিয়ান, শ্রমিকসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন।
 মাওয়ার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে চলছে পদ্মাসেতু নির্মাণের মহাযজ্ঞ কাজ, ছবি: দীপু মালাকার
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও অত্যাধুনিক হ্যামার ক্রেন দিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের গর্ব পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এখন গোটা বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এই ‘পদ্মা সেতু’। বিশ্বকে আঙ‍ুল দেখিয়ে নিজেদের প্রমাণ করার ঐতিহাসিক এই কর্মযজ্ঞ দেখতে পেরে নিজেকে কেমন জানি ভাগ্যবান মনে হলো।

পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে ইতোমধ্যে সেতুর একটি স্প্যান তৈরি করে রাখা হয়েছে। স্প্যানটি দেখিয়ে পদ্মাসেতু প্রকেল্পর দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানালেন, এ রকম আরও ৪০টি স্প্যান তৈরি করা হবে। স্প্যানটির ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন, ওপর দিয়ে গাড়ি। পিলার, পাইলের কাজ শেষ হলে স্প্যান তার ওপর বসিয়ে দেওয়া হবে।

ক্রেন দিয়ে গুড়া করা পাথর সরানো হচ্ছে, ছবি: দীপু মালাকার
নির্মাণ কাজ ঘুরে দেখা গেল, মাওয়া পয়েন্টে সেতুর ওয়ার্কশপে আরও কয়েকটি স্প্যান নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। স্পিডবোড যোগে ঘুরে দেখা যায়, নদীর মাঝখানেও চলছে পিলার বসানোর কাজ। শীতের মৌসুম হওয়ায়, নদীতে স্রোত না থাকায় সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জাজিরা পয়েন্ট টোলপ্লাজা নির্মাণ সম্পন্ন প্রায়। ১২ কিলোমিটার চোখ ধাঁধানো চার লেনের এ্যাপ্রোচ রোডও প্রায় শেষ। এই রোডের ব্রিজগুলোও তৈরি পুরোপুরি। এখন শুধু খুলে দেওয়া বাকি। গতবছর এই সময়ে এখানে ছিলো ধুলোর ওড়াওড়ি। এখন পিচঢালা সড়কে পিচ্ছিল গতি।

শ্রমিকের হার ভাঙ্গা খাটুনির মধ্যদিয়ে পদ্মার বুকে গজিয়ে উঠতে থাকা এ সেতু যেন দেশের বীরত্ব ও স্বপ্ন দেখার ক্ষমতাকে উন্নত শিরে জানান দিচ্ছে। দিন শেষে এক স্বপ্ন বাস্তবায়ন দেখে বুক ভরা গর্ব নিয়ে ঢাকায় ফেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এমসি/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।