ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শুকিয়ে শীর্ণ,পানিশূন্য যমুনেশ্বরী!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
শুকিয়ে শীর্ণ,পানিশূন্য যমুনেশ্বরী! এক যমুনেশ্বরীকে বলা হতো 'প্রমত্তা'। কিন্তু আজ শুকিয়ে পানিশূন্য। এমনকি কোথাও কোথাও এর গভীরতা হাঁটুপানিরও কম; ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: কোথাও হাঁটু পানি,কোথাও ধু-ধু বালুচর, আবার কোথাও বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার। এ চিত্র রংপুর বদরগঞ্জের বুক চিরে বয়ে চলা এক সময়ের প্রমত্তা যমুনেশ্বরী নদীর। যমুনেশ্বরী নদীটি এখন পানিশুন্য।

শুষ্ক মৌসুম পুরোপুরি না আসতেই নদীটির পানি শুকিয়ে গেছে। জেগে উঠেছে চর।

এককালে এ নদী অনেক খরস্রোতা ছিল। কিন্তু কালের আবর্তে তা বিলীন হতে চলেছে। শুকিয়ে যাওয়া নদীতলদেশে চাষিরা এখন ফসল আবাদ করছেন। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই পাড়ের অসংখ্য মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে জেলে পরিবারগুলোর দুঃখ দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে।

যমুনেশ্বরী নদীর পানি প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য দরকার ছিল সময়মতো ড্রেজিং করা। কিন্তু তা করা হয়নি বলে নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। অন্যদিকে নদী তার গতিপথও বদলে ফেলেছে।

এক সময়ে এই যমুনেশ্বরী নদীতে বড় বড় নৌকা আর ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলতো। এখন তা সূদুর অতীতের গালগল্প। কোথাও কোথাও পানি না থাকায় লোকজন পায়ে হেঁটেই পার হচ্ছে। আবার কোথাও হাঁটু পানি ভেঙে নদী পার হচ্ছে মানুষ। যেখানে কিছুটা পানি আছে সেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলছে নদী পারাপার।

যমুনেশ্বরীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পুরোপুরি শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই টিউবওয়েলে পানি ওঠা কমে গেছে।
নদীতীরবর্তী এলাকার নাওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা চঞ্চল মিয়া সখেদে বললেন,  নদীতে পানি না থাকায় পানির স্তর নেমে গেছে । আর এর ফলে আমাদের খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফসলের ক্ষেত খামারে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়ায় আবাদ ঠিকমতো হচ্ছে না।

এক সময়ের প্রমত্তা যমুনেশ্বরী সংকুচিত হতে হতে এখন শীর্ণ খালের চেহারা নিয়েছে; ছবি: বাংলানিউজ বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বললেন, যমুনেশ্বীর পানি শুকিয়ে যাবার কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর ভয়ানক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক বছরে এ এলাকার উৎপাদন কমে গেছে। রুক্ষ মরুময় হয়ে উঠছে প্রকৃতি।
ভয় হয়, আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে যমুনেশ্বরী নদীর উৎসমুখে পলি পড়তে শুরু করে। কিন্তু খনন কাজ না করা সহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের লাইফলাইন বলে পরিচিত নদীটি। এছাড়া অবৈধ দখলদারদের দ্যৌরাত্ম্য তো রয়েছেই।

বদরগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কনকচন্দ্র রায় বলেন, নদী খনন না করার কারণে পলি জমে জমে নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে।

কৃষকরা ভূ-গর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত ব্যবহার করার কারণেও পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নদীতীরবর্তী অঞ্চলের চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।
বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, দ্রুত নদী খনন করা না হলে নদীতীরবর্তী জমির ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরও যাবে। নদীটি আরও শীর্ণকায় হতে থাকবে।  
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এসআরআর/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।