ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘গুণগান পরে গাইবো, আচার-ব্যবহার আগে দ্যাখে’

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
‘গুণগান পরে গাইবো, আচার-ব্যবহার আগে দ্যাখে’ চায়ের স্টলে চলছে বিবিধ বিষয়ে তুুুমুল আড্ডা/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চার রাস্তার মোড় পেরিয়ে ব্যস্ত সড়কে হুইসেল বাজিয়ে এগোচ্ছে সারি সারি গাড়ি। সকালের সূর্যটা তখন মাথার উপর তীর্যকভাবে। শীতের ভাবটা কেটে রোদ কিছুটা উষ্ণতা দিচ্ছে। পাশের চায়ের দোকানে পাঁচ-সাতজন বসা, এদের দু’একজন মধ্য বয়সের। বাকিরা পঞ্চাশ পেরিয়েছে। দোকানদার টুং টাং শব্দ করে চা নাড়ছেন। সামনের বেঞ্চে বসা দু’জন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আলোচনায় মগ্ন।

সামনের দু’টি বেঞ্চের একটিতে এদের একজন বেঞ্চের শেষ মাথায় বসে আছেন অনেকক্ষণ। মাঝখানের জায়গাটা ফাঁকা।

সামনা-সামনি বেঞ্চে বসে তিনি এক প্রসঙ্গ থেকে আরেক প্রসঙ্গে যেতে সময় নিচ্ছেন কয়েক সেকেন্ড।

চায়ের দোকানে যেতে দু’জন কাছাকাছি হয়ে ছাড়ছেন বেঞ্চের এক মাথা। বসার আহ্বান জানালেন মধ্যবয়সী লোকটি। দোকানের কাছাকাছি বেঞ্চে বসে চলছিল তাদের আলাপচারিতার দিকে নজর।

সৌজন্যের খাতিরে ভালো-মন্দ প্রসঙ্গ শেষে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানতে প্রশ্ন ছোড়া হলো সেই আড্ডায়। প্রসঙ্গ টেনে নিলেন ওই পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিটিই।

‘সব সরকারই কাজ করে। তয় মূল্যায়ন করতে গেলে আওয়ামী লীগ। আর ব্যক্তিগতভাবে মূল্যায়ন করতে গেলে রদবদল হইবো। কে কী করছে না করছে দেখতে গেলে তো সরকার বদল’, এক বাক্যেই শেষ করে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন তিনি।
চা দোকানি জাকির হোসেন
নাম জিজ্ঞাস করতে জানালেন, আজিজার রহমান। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ২০-২২ বছর। সেই হিসাবে এখন সত্তরের কাছাকছি। নিজেই হিসাব কষে বের করলেন। জন্মস্থান বরিশালের হিজলায়। নদী ভাঙনে বেশ কয়েকবার বাড়ি তলিয়ে গেছে, সেকথাও বলছিলেন।  

সরকারি ছুটির দিন সোমবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ মিরপুরের কালশী এলাকায় বালুর মাঠের পাশে রাস্তার পাশের দোকানটিতে কথা হচ্ছিলো আজিজারের সঙ্গে।  

এই দোকানে চায়ের পাশাপাশি বিস্কুট, সিগারেট, চিপস, বাচ্চাদের খেলনা ঝোলানো সামনের দিকেই। এরই ফাঁকে একজন এসে চিপস কিনলেন এক প্যাকেট।  

চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন আজিজার। বললেন, ‘তয়, পরিবর্তন হওয়া দরকার। ’

আজিজারের স্ত্রী ও দুই ছেলে গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তিনি কাজ করেন না, রাস্তার পাশে ভাড়া বাসায় থাকেন। কাজ নেই, তাই সারা দিনই আশপাশে আড্ডা দেন।

সামনের বেঞ্চে দু’জন বয়স্ক ব্যক্তি। একজন সুর মেলালেন, ‘যে কাজ করবে হেই থাকবো। এক সরকার যাইবে আর এক সরকার আইবো। ’

তার কথা কেড়ে নিয়ে আজিজার বলেন, ‘কাজের দিক দিয়া এই সরকার ভালো করছে। কিন্তু এখন কিছু কাজ দলের বাইরে…। ’

‘মানুষ উন্নয়নের গুণগান পরে গাইবো। আচার-ব্যবহার আগে দ্যাখে। পত্রিকা খুললে দেখা যায়- উৎপাত। উৎপাত যদি দমন করতে না পারে তাহলে পল্টি!’

নিমিষেই বর্তমান সরকারের কাজের মূল্যায়ন করে ফেললেন আজিজার।

‘এই সরকারের কাছে ধন্যবাদ এটাই, দেশের কাজ হইছে, উন্নয়ন হইছে। আগে দিনে দুপুরে চায়ের দোকানে বসলে ছিনায়ে নিয়ে গেছে। এখন এইটা নাই। এমনে ছিনায়া নেয় না, কিন্তু ঘুরায় নেয়। ’   

‘এই উৎপাত যতদিন বন্ধ না হইবো, ততো দিন সুশাসন হইবো না। নেতাদের দিয়া বন্ধ করতে হইবো,’ জানিয়ে তিনি আবারও বলেন, ‘উন্নয়নের দিক থেকে চাইতে গেলে আওয়ামী লীগকে রাখতে হইবো। পকেটে মানি একজনের, নষ্ট করবে দশ জনেরটা। ’

দেশের খোঁজ-খবরও রাখেন আজিজার। কথার প্রসঙ্গেই বললেন, ‘এখানে থাকলেও জানি, ঝন্টু ব্যক্তি হিসেবে হেরেছেন। ব্যবহারটা তার ভালো থাকলেই…। ’

এই সরকারের সময়ে কয়েক বছরে পরিবর্তন বা উন্নয়নটা যে হয়েছে তা জানালেন আজিজার। রাস্তার উদাহরণ দিয়েই বললেন, আগে সারা দিনে হোন্ডা দেখা যেতো ২টা, এখন একটা সিগন্যালে পঞ্চাশটা।
আলাপচারিতার মধ্যে বিদায় নিলেন আজিজার, বেঞ্চ থেকে উঠলেন আরও দু’জন।  

দোকানের মালিক জাকির হোসেনের বয়স পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি। চায়ের দোকানে আগে যে আড্ডা ছিল এখন সেটা নেই। তবে বয়স্ক ব্যক্তিরাই মাঝে মধ্যে বসে জমিয়ে রাখেন।

বলছিলেন, বাজার দর থেকে শুরু করে দেশে-বিদেশের খবরাখবর নিয়ে পরিচিতদের মধ্যে আলোচনা জমিয়ে রাখেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।