ঢাকা, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

দক্ষিণখানের রাস্তায় সারা বছরই বর্ষা

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
দক্ষিণখানের রাস্তায় সারা বছরই বর্ষা দক্ষিণখান সড়কে জমে থাকা পানি

বেলা তখন দুপুর ১টা। রাজধানীর দক্ষিণখান মোল্লাটেক বাজারে আসতেই দেখা গেলো রাস্তাজুড়ে ঢেউ খেলছে পানি। যখনই কোনো রিকশা, অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার চলাচল করছে ঠিক তখন পানির ঢেউ বড় আকার ধারণ করছে। রাস্তার আবর্জনার সঙ্গে নোংরা এই পানি মিলেমিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

রাস্তাজুড়ে নোংরা পানির ঢেউ আর থিকথিকে কাদার ছড়াছড়ি থাকায় রাস্তার দুই পাশের দোকানের সামনের অপ্রশস্ত জায়গা দিয়ে লাইন ধরে হাঁটছেন পথচারীরা।

একই সড়কের নোয়াপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাজুড়ে শুধু গর্ত আর গর্ত।

এ সময় দেখা যায় হাজিক্যাম্প থেকে দক্ষিণখানের উদ্দেশে আসা একটি অটোরিকশা গর্তে পড়ে গেছে। অটোরিকশা থেকে যাত্রীরা তড়িঘড়ি নেমে চলে যান। কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়া অটোরিকশাটি আর চালু হয়নি। প্রতিদিন এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে বলে জানান স্থানীয়রা।   

আরেকটু সামনে এগোতেই দেখা গেলো, গাওয়াইর বাজারের সামনের এই রাস্তাও খানাখন্দে ভরা। বড় বড় গর্তের কারণে প্রাইভেটকার কিংবা অটোরিকশা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে না। ফুটপাত দখল করে তার ওপর দিয়ে চলাচল করছে। এ সময় কলা বহনকারী একটি ভ্যান গর্তে পড়ে যায়। স্থানীয় লোকদের সহায়তায় উদ্ধার হয় ভ্যানটি।

শুধু গাওয়াইর, মোল্লারটেক, নোয়াপাড়া নয়, দক্ষিণখানের কসাইবাড়ি, কাঁচকূড়া, দুবাদিয়া ও সাইনবোর্ড এলাকার সর্বত্রই রাস্তার এই বেহাল চিত্র দেখা গেছে।

সোমবার (ডিসেম্বর ২৫) সকাল সাড়ে ১১টায় দক্ষিণখান বাজার থেকে একটু সামনে এসে আশকোনা যেতে চাইলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও অটোচালকরা হলানের রাস্তা দিয়ে চলে যেতে পরামর্শ দেন। হাজিক্যাম্পের রাস্তা ভালো না জানান তারা।

উত্তরা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাস্তায় তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বাংলানিউজকে বলেন, গর্ত ও কাদার জন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। রিকশা কিংবা অটোতে উঠলে ভয় হয়- কখন উল্টে যায়, কখন রাস্তার কাদাযুক্ত পানিতে পড়তে হয়।

অটোরিকশা চালক সাজেদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ৪/৫ বছর ধরে এই রাস্তাটা অচল। সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যান বলছেন শিগগিরই রাস্তা ঠিক হবে। কিন্তু হচ্ছে না। এই রাস্তায় অটোরিকশা চালাতে গিয়ে প্রতিদিনই অটোরিকশার ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন পার্টস নষ্ট হচ্ছে।

বাবুল হোসেন বাবু নামে এক চালক বাংলানিউজকে বলেন, একে তো রাস্তার কারণে যাত্রী কম হয়। অন্যদিকে অটোর খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে মালিকের পাওনা আর গাড়ির খরচ দেওয়ার পর দিনে এক-দেড়শো টাকা থাকে।

তিনি বলেন, মাজার রোডে অটোরিকশা চালানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ওইখানে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে পারছি না। তাই এখানে চালাচ্ছি।

জানতে চাইলে আক্ষেপের সুরে বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা তপু বলেন, এই রাস্তায় বারো মাস বর্ষাকাল। নারী-শিশু-পুরুষ যেকোনো বয়সের মানুষ এই রাস্তায় রিকশা চড়ে গেলে তার হাড়গোড় ঠিক থাকে না।  
নোয়াপাড়ার রাব্বানি এন্টারপ্রাইজের মালিক বাংলানিউজকে বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে ভাড়া বেশি দিলেও রিকশা-অটোরিকশা আসতে চায় না। এ কারণে দোকানে মাল ও কাস্টমার দুইটাই কম।

ভাঙাচূড়া এই রাস্তায় সারা বছরই কাদায় মাখামাখি থাকে জানিয়ে গাওয়াইরের বরিশাল ফার্নিচারের মালিক আনিসুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা। ভাড়া বেশি দিলেও রিকশা বা অটোরিকশা মালপত্র নিয়ে এই রাস্তায় আসতে চায় না।

এ বিষয়ে দক্ষিণখান আদর্শ (স্থানীয়) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের অফিসে গিয়ে কথা বলতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এমএফআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।