ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মর্গে গৃহবধূর মরদেহ, ২ লাখ টাকায় আপোষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
মর্গে গৃহবধূর মরদেহ, ২ লাখ টাকায় আপোষ মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গ। ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: পারিবারিক কলহের জের ধরে চারদিন আগে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নুপুর বেগম (২২) নামে এক গৃহবধূ। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চারদিন হাসপাতালে থাকার পর মৃত্যু হয় তার।

সেই মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রেখে শ্বশুরের সঙ্গে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে আপোষ করলেন আমিজ উদ্দিন (২৭) নামে এক স্বামী।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের জান্না গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের রাইল্যা দক্ষিণপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেনের মেঝো মেয়ে নুপুরের সঙ্গে একই ইউনিয়নের জান্না গ্রামের চিকুনদির ছেলে আমিজ উদ্দিনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক কলহ ছিলো তাদের মধ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় চারদিন আগে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই গৃহবধূ।

এ ঘটনার পর গুরুতর আবস্থায় নুপুরকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন নুপুরের শ্বশুরবাড়ি ও আশপাশের লোকজন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।  

মারা যাওয়ার পরপরই স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারের সহায়তায় নুপুরের বাবাকে নগদ ২ লাখ টাকা দিয়ে মৃত্যুর বিষয়ে আপোষ করেন। এতে করে মেয়ের বাবা ছাড়াও স্থানীয় মাতব্বরদের পেছনেও মোটা অংকের টাকা ব্যয় করেন আমিজ উদ্দিন।  

বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে কথা হয় ফুকুরহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আনিসুর রহমান আনিসের সঙ্গে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে মারা যাওয়ার সে মারা গেছে। ওই বিষয়টি নিয়ে আর কিছুই করার নেই। মেয়ের বাবা যেন কোনো ধরনের অভিযোগ না করে এজন্যে তাকে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে’।

টাকা লেনদেনের সময় মেয়ের বাবার বাড়ি এলাকার দেলোয়র মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।  

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই দুই ওয়ার্ডের সামনে মেম্বার ছাড়াও স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজন গ্রাম্য মাতব্বর রয়েছেন।

হাসপাতালের মর্গ থেকে মেয়ের মরদেহ বুঝে নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা নুপুরের বাবা দুলাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেয়ে বিষপান করার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসি। পারিবারিক কলহের জের ধরেই মেয়ে বিষপান করেছে। তবে এ বিষয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই’।  

মেয়ে মারা যাওয়ার পরপরই মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন ২ লাখ টাকা নগদ দিয়ে কোনো অভিযোগ না করার অনুরোধ করেছে। এর বেশি আর কিছু বলা সম্ভব নয় বলেও জানান মৃত নুপুরের বাবা দুলাল মিয়া।

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিষপানে আত্মহত্যা করার পর টাকা লেনদেন করে আপোষ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে এ বিষয়ে লিখিতভাবে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নুপুরের এক প্রতিবেশী বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেয়েটিকে পারিবারিকভাবে বেশ অত্যাচার-নির্যাতন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্যভাবে কয়েকবার সালিশ হয়েছে। মেয়ে বিষপান করার পর থেকে মেয়ের বাবা ওই ঘটনার উপযুক্ত শাস্তির দাবিও জানিয়েছিলেন’।

‘কিন্তু মেয়ে মারা যাওয়ার পর ২ লাখ টাকা নগদ পেয়ে সব কিছুই ভুলে গেল মেয়ের বাবা। বিষয়টি খবুই লজ্জাজনক। মাত্র ২ লাখ টাকায় মেয়ের মরদেহটিও বিক্রি করলো বাবা। তবে এভাবে চলতে থাকলে সামাজিকভাবে মেয়েরা আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।