ঘড়ির কাঁটায় রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের আগেই নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মাতে বিশ্ব। দেশের তরুণ-যুবকেরাও ভাসে উৎসবের আনন্দে।
নানা ঘটনায় পুরনো ২০১৭ সাল পার হলেও সামনের বছর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর জাতীয় নির্বাচন, তথা ভোটের বছর। আর সে হিসেবে রাজনৈতিকভাবে বেশ উত্তপ্তই থাকবে মাঠ।
বছরের শুরুর দিনটি শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দের বটে। দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের চার কোটি ৪২ লাখ চার হাজার ১৯৭ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি পাঠ্যবই তুলে দেবে সরকার।
বিদায়ী ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। এ অর্জন বাঙালি জাতি হিসেবে অত্যন্ত গৌরবের। এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট যথাযথভাবে সামলে বাংলাদেশ সরকার বৈশ্বিক দরবারে কুড়িয়েছে প্রশংসা।
ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুরনো বছরের হিসাবের খাতা খুলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বাক্ষরতার হার ৭২ শতাংশের বেশি হয়েছে। দেশের ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায়। সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুদ পাচ্ছে। গড় আয়ু বেড়ে ৭১ বছর ৮ মাস হয়েছে।
সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে পদ্মাসেতু নির্মাণ। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন সমুদ্রবন্দর পায়রার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলের সুযোগ যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে।
নতুন বছরে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘সময় থেমে থাকে না। এগিয়ে চলাই সময়ের ধর্ম। …বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। তাই জাতীয় জীবনে ইংরেজি বর্ষপঞ্জি প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। ’
‘নববর্ষ সবার মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, খ্রিস্টীয় নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি। ’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘আসুন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের আগে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবো ইনশাল্লাহ। ’
‘নতুনের আহ্বানে পুরাতন সব জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। নতুন বছর আমাদের সবার জীবনে অনাবিল সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি বয়ে আনুক। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনা করি। ’
বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা এবং সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত করার ক্ষেত্রে ২০১৭ সাল আমাদের জন্য একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বছরটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যময় বছর। ’
‘গত বছর দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। ’
খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১৮ সবার জীবনে অনাবিল আনন্দ ও কল্যাণ বয়ে আনুক - এই কামনা দেশবাসীরও।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮
এমআইএইচ/এইচএ/