মঙ্গলবার (০২ জানুয়ারি) বিকেলে সেতুটির উদ্বোধন করা হয়। এতে ঝাঁপা গ্রামের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উদ্বোধন উপলক্ষে ভাসমান সেতুটির মধ্যবর্তী স্থানে দু’টি লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়েছে, আর পুরো আধা কিলোমিটার সেতুটির দুই ধার দিয়ে অসংখ্য রং-বেরংয়ের বেলুন টানিয়ে সাজানো হয়েছে। তেমনি, সেতুর প্রবেশদ্বারে একটি বড় তোরণ এবং অতিথিদের বসার জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয়। জানা গেছে, ঝাঁপা গ্রামটিকে ঘিরে রাখা ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং পৌনে এক কিলোমিটার প্রস্থ মিলে ৬৪০ একর জলাকারের ঝাঁপা বাঁওড়ের মধ্যভাগে ১৮ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত গভীরতা রয়েছে। সরকার বাঁওড়টি ইজারা দিয়ে বছরে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা আয় করলেও গ্রামবাসীর কষ্ট লাঘবে উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার, সমস্যা সমাধানে স্বপ্ন দেখেনি কোনো জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতারা। তবে ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে নানা প্রতিকূলতা টিকে থেকে কৃষি, মৎস্য এবং বৈদেশিক আয়ে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখন অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সাবলম্বী। ফলে প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয়দের অর্থায়নে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এক হাজার ফুট লম্বা ভাসমান সেতুটি।
ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদী হাসান টুটুলের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন, মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওবায়দুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান, ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু, চালুয়াহাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার প্রমুখ।
ভাসমান সেতু নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা ঝাঁপা গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, নদ-নদীতে ভাসমান প্লাস্টিকের ড্রামের উপর ড্রেজার মেশিন রেখে পানি-বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখে প্রশ্ন জন্মে, অধিক ওজন সম্পন্ন মেশিনটি যদি প্লাস্টিকের ড্রামের উপর থাকতে পারে তাহলে এমন পদ্ধতিতে অল্প ব্যয়ে যে কোনো সেতু তৈরি সম্ভব কি না!
ভাসমান সেতু তৈরির কাজে নিয়োজিত স্থানীয় রাজগঞ্জ বাজারের বিশ্বাস ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এক হাজার ফুট লম্বা ও চার ফুট চওড়া ভাসমান এই সেতু নির্মাণে ৮৩৯টি প্লাস্টিকের ড্রাম, ৮০০ মণ লোহার পাত ও ২৫০টি লোহার অ্যাঙ্গেল সিটের ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ভাসমান সেতুটিকে একইস্থানে আটকে রাখতে দুই পাশদিয়ে ৬০টি নোঙ্গর বসানো হচ্ছে। ইতোপূর্বে এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলেও উদ্যোক্তাদের পরামর্শে তিনি এ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন বলেও জানান। ৫০ লক্ষাধিক টাকা খরচে নির্মিত এই ভাসমান সেতু উন্মুক্ত হলে, বাই সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, ইজিবাইক ও নসিমন চলাচল করবে। তবে প্রাইভেট কার চলাচলের সক্ষমতা থাকলেও সেতুর দীর্ঘস্থায়ীয়তার কথা বিবেচনা করে প্রাইভেট কার চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।
ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক লিটন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভাসমান সেতুটি গ্রামবাসীর চলাচলের সুবিধার্থে করা হয়েছে। এতে বাণিজ্যিক কোনো চিন্তা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এতোদিন নৌকায় পারাপারের জন্য মাঝিদের গ্রামবাসী সপ্তাহে পাঁচ টাকা করে নগদ এবং বছরে এক মণ করে ধান ও ইচ্ছামাফিক মৌসুমি ফসল দিতেন। একই খরচে গ্রামবাসী ভাসমান সেতু ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বাইরের এলাকার লোকজন পূর্বের নৌকার মতো নির্ধারিত টাকা দিয়ে সেতু পার হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৮
ইউজি/এসএইচ