মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের দলনেতা ফয়সাল রহমানের বাসা থেকে এই মালামাল জব্দ করেছে কাফরুল থানা পুলিশ। পরে কাফরুল থানা পরিদর্শকের (অপারেশন) কক্ষে এতো মালামাল দেখে চোখ কপালে ওঠে সংবাদকর্মীদেরও।
কাফরুল থানা পুলিশ বলছে, আটক ফয়সাল মিরপুর এলাকাভিত্তিক ছিনতাই চক্র ‘টানা পার্টি’র প্রধান। এ চক্রের সদস্যরা রাজধানীর রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরে, আর সুযোগ পেলেই ভ্যানিটি ব্যাগ, মোবাইল বা অন্যান্য জিনিসপত্র ছো মেরে পালায়। ফয়সালকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার তথ্য ধরে আরও কয়েকজনকে পাকড়াও করতে অভিযান চলছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর দয়াগঞ্জে ছিনতাইকালে পাঁচ মাসের শিশু আরাফাতের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর কয়েকডজন ছিনতাইকারী আটক হয়েছে। সবশেষ আটক হলেন ফয়সাল।
সেদিন সদরঘাট থেকে রিকশাযোগে আরাফাতকে কোলে নিয়ে শনির আখড়া যাচ্ছিলেন তার মা আকলিমা। দয়াগঞ্জে পৌঁছালে হঠাৎ এক ছিনতাইকারী তার ব্যাগ ধরে টান দেয়। এতে আরাফাত তার মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে, পড়ে যান আকলিমাও। এসময় পিকআপ ভ্যানের চাপায় ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় আরাফাতের।
তারও আগে অক্টোবরে টিকাটুলীতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়া এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান আবু তালহা নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্র মতে, রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিন গড়ে ১২-১৫টি ছিনতাই হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই এ নিয়ে থানা মামলা বা অভিযোগ করেন না। সেজন্য পুলিশের পরিসংখ্যানের চেয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা আরও বেশি বলেই মনে করা হয়। যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হিসাব মতে, সদ্যবিদায়ী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীতে ছিনতাই মামলা হয়েছে ৭৯টি।
কাফরুল থানায় আটক ‘টানা পার্টি’র প্রধান ফয়সাল জানান, তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে। ঢাকায় এসে তিনি মিরপুরে একটি বায়িং হাউজে কাজ শুরু করেন। ওই চাকরি চলে যাওয়ার পর ছিনতাইয়ে নামেন ফয়সাল।
এক বছর ধরে মিরপুরে ছিনতাই করে আসা ফয়সাল জানান, তাদের চক্র মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে ১৪ নম্বর ডেন্টাল কলেজ পর্যন্ত রাস্তায় বেশি সক্রিয় ছিল।
কেন এতো জিনিসপত্র বাসায় রেখেছেন- জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, ইচ্ছে ছিল কিছু জিনিসপত্র বিদেশে বিক্রি করবো, কিছু আবার নিজের স্ত্রীর জন্য রেখেছিলাম। এসবের মধ্যে কয়েকটি ভ্যানিটি ব্যাগ স্ত্রীর জন্য কেনা।
এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহম্মেদ বলেন, ছিনতাইকারীর বাসা থেকে এতো মালপত্র ও অন্য আলামত পাওয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন।
এ চক্রের অন্য সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে একাধিক টিম কাজ করছে বলেও জানান ডিসি মাসুদ।
ফয়সালের মিরপুরের মিতালী হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর ভাড়া বাসায় কয়েকটি বড় ব্যাগের ভেতরে লুকিয়ে রাখা ছিনতাইয়ের মালামালের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৩টি মোবাইল হ্যান্ডসেট, ৬০টি ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্স, বিভিন্ন ব্যক্তির ৮টি জাতীয় পরিচয়পত্র, বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড। পাওয়া গেছে এক ভরি ছয় আনা ওজনের ২টি স্বর্ণের চেইন, ২টি আংটি, ২৪০ জোড়া চাবির রিং, চাকু, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৭৮ জনের পরিচয়পত্র, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ৭৮টি সিমকার্ড এবং নগদ ২৪ হাজার ২৮৫ টাকা।
আলামত অনুযায়ী ফয়সালের নেতৃত্বাধীন চক্রের ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক রওশন আরা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী সানজিদা আরেফিন, ইউসেফ বাংলাদেশের শিক্ষার্থী বিজলী বেগম, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার, জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের মেডিকেল অফিসার শাহিদা সুলতানা, পল্লবীর বাসিন্দা লাকি ইসলাম, যশোরের সাজিয়া সুলতানা, আহমদ দিদার, আসমা আফরোজ, নার্গিস আক্তার, সুমি আক্তার, শামীমা ও মাহমুদুল হক পাটোয়ারী। এদের কারও জাতীয় পরিচয়পত্র, কারও কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে ফয়সালের বাসায়।
কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসলাম উদ্দিন জানান, ছিনতাই চক্রের প্রধান ফয়সালের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। এরপর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে তোলা হবে।
কেউ ছিনিয়ে নেওয়া মালামালের ব্যাপারে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারলে আদালতের মাধ্যমে তা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান কাফরুল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) কামরুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৭
এইচএ/