দায়িত্ব নেওয়ার পর বছরের শুরুতে বার্ষিক পরিকল্পনা দিতেন এই প্রতিমন্ত্রী। বিভাগকে গতিশীল করতে কাজ করতেন কর্মকর্তাদের নিয়ে।
মন্ত্রিসভার রদবদলে অন্য তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমেরও দফতর বদল হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মোস্তাফা জব্বার।
তারানা হালিম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন বলেই আমি কাজ করেছি…। ’ তবে আগামী দিনের বিষয়ে কথা বলেননি এই নেত্রী।
তার ঘনিষ্টজনেরা মনে করছেন, বেশ ভালোমতই চালিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তার মাথায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ঘুরপাক খাচ্ছিলো। ঠিক এই মুহূর্তেই মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব বদল হলো তার।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য অপেক্ষাধীন। উৎক্ষেপণের জন্য দীর্ঘ কর্মসূচিও হাতে নিয়েছিলেন তারানা হালিম। ১ মার্চ থেকে নানা কর্মসূচি পালিত হতো।
দীর্ঘ সময়ের জটিলতা পেরিয়ে এক নম্বরে অন্য সব মোবাইল অপারেটরের সেবা বা এমএনপি সেবার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে তা উদ্বোধনের কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে তা উদ্বোধনের ইচ্ছা ছিল প্রতিমন্ত্রীর। ফোরজি গাইডলাইন চূড়ান্ত করে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। ফেব্রুয়ারিতে তা চালু হওয়ার কথা ছিল।
দু’বছর আগে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু ও শেষ করে অবৈধ ভিওআইপি প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল বলে দাবি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের। এজন্য প্রতিমন্ত্রীর কৃতিত্বকেই মূল্যায়ন করছেন তার ঘনিষ্টজনেরা। তবে সেই জায়গাটায় থাকতে পারলেন না প্রতিমন্ত্রী।
ইন্টারনেটের মূল্য কয়েক ধাপ কমালেও গ্রাহক প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় নানা সময়ে সমালোচিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। তবে মূল্য কমানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হয়েছে তার সময়ে। কুয়াকাটায় স্থাপন হয়েছে ল্যান্ডিং স্টেশন। অপটিক্যাল ফাইবারের কাজও চলছিল।
সমালোচকদের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের সেবার মান বাড়ানোর সুযোগ থাকলে তিনি পারেননি। যদিও বাজেট বরাদ্দ না পাওয়াকেই বারবার দুষেছেন প্রতিমন্ত্রী।
তবে প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায়ই টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার ২৩টি বৃদ্ধি, রিটেইলার সংখ্যা ৩৬ হাজার থেকে ৫৬ হাজারে উন্নীত হয়। আর কলড্রপে মোবাইল অপারেটরদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। টেশিসের ২৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনীতি, পদ-পদবির চেয়ে কাজকেই গুরুত্ব দিতেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আর এজন্যই হয়তো ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৭২ লাখে উন্নীত, টেলিডেনসিটি ৮৬.৬ শতাংশ ও ইন্টারনেট ডেনসিটি ৪৭.৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে তার সময়েই।
টেলিকম খাতের পাশাপাশি ডাক বিভাগের ২৩টি পয়েন্টে ই-কমার্স চালু, এজেন্ট ব্যাংকিং, ডাক-টাকার সফটওয়্যার উদ্বোধন করে তিন মাসের মধ্যে চালুর কথা ছিল এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম। সব মিলিয়ে বাস্তবায়নে পরপর দু’বছর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রথম স্থান অর্জন করেছিল।
সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম ফেসবুকে দিয়ে তারানা হালিম লিখেছিলেন, সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত থাকবে ২০১৮ সালেও। এটাই প্রত্যাশা...। আপনারা সঙ্গে থাকুন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এমআইএইচ/এইচএ/