প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনার পর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা ইউনিট প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পুলিশের দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ও আবু কাওছারসহ বোমা ডিসপোজাল টিম কাজ শুরু করে। অন্ধকারে টর্চের আলোয় চলছিলো আলামত খোঁজা।
কর্তব্য পালনে পিছ পা হননি। দেশের তরে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন এই তিন কর্মকর্তা। এবার তাদের মরণোত্তর বিপিএম পদক দিয়ে সম্মান জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ। এছাড়া আতিয়া মহলে জঙ্গিদের পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে আহত এসএমপি’র দক্ষিণ সুরমা থানার সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) জনি লাল দে পাচ্ছেন পিপিএম পদক।
পুলিশ সদর দফতরের এমন সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে সিলেটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, আতিয়া মহলে নিহত র্যাব-পুলিশের তিন কর্মকর্তা মরণোত্তর বিপিএম পদক পাচ্ছেন। এছাড়া পিপিএম পদক পাচ্ছেন এএসআই জনি লাল দে।
সেই সঙ্গে বীরত্বপূর্ণ অবদান স্বরূপ বিপিএম পদক পাচ্ছেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম এবং হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা।
গেলো বছরের ২৪ মার্চ ভোরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী আতিয়া মহল ঘিরে রাখে পুলিশ। ওইদিন দুপুরে সোয়াট সদস্যরা আতিয়া মহলে অভিযানে আসেন। কিন্তু জঙ্গি আস্তানা পর্যবেক্ষণের পর অভিযানে না গিয়ে সেনাবাহিনী তলব করে সোয়াট। পরদিন ২৫ মার্চ ভোরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা ৭৮ জিম্মি উদ্ধারের পর জঙ্গি দমনে অপারেশন টোয়াইলাইট পরিচালনা করেন।
এদিন সন্ধ্যায় অভিযানের অগ্রগতি নিয়ে সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসানের ব্রিফিং শেষে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন সড়কের পাশে বোমা দু’টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
দুই দফা বিস্ফোরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ তিন কর্মকর্তা ছাড়াও নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম অপু ও ফাহিম আহমদ এবং ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। অপারেশন টোয়াইলাইটে ১১১ ঘণ্টার অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন কর্মকর্তা, চার জঙ্গিসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৪৪ জন।
এদিকে, আতিয়া মহলের পর মৌলভীবাজারে বড়হাট ও নাসিরপুর জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখে পুলিশ। জেলা সদরের বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ এ নারীসহ তিন জঙ্গি নিহত হন। এছাড়া সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুরে পরিচালিত ‘অপারেশন হিট ব্যাক’ এ দুই নারী ও চার শিশুসহ সাতজন নিহত হন।
মৌলভীবাজারের পৃথক জঙ্গি বিরোধী অভিযানে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) রাশেদুল ইসলাম ও সদর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মানিক রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক পিপিএম এর জন্য মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়া সাহসিকতা-বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরাকে পিপিএম প্রদান করা হচ্ছে।
৮ জানুয়ারি রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিহতদের স্বজনদের হাতে এই পদক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-২ কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনেও নিহত তিন কর্মকর্তাসহ সাতজনের নাম রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এনইউ/এসআই