জেলার ২৮টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তবে এর বাইরে জেলায় আরও অন্তত অর্ধশত অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার মহিষডাঙ্গা এলাকায় ৫-৬ বছর আগে স্থানীয় সোবাহান কাজী গড়ে তুলেছেন এমসিকে ব্রিকস। যেখানে ড্রাম-চিমনি ব্যবহার করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, নষ্ট করা হচ্ছে ফসলি জমি, আর ভাটার পাশেই স'মিল বসিয়ে কাঠ চেরাই করে উজাড় করা হচ্ছে বনভূমি। বছরের পর বছর এভাবে অনিয়ম করে গেলেও বহাল তবিয়তে টিকে আছে এ অবৈধ ইটভাটাগুলো।
বরগুনা জেলায় এরকম অন্তত অর্ধশত ইটভাটা অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। ভাটা নিয়ন্ত্রণে আলাদা আইন থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের নেই সময় অনুযায়ী তেমন কোনো তৎপরতা।
বরগুনার কুমড়াখালী, কাকচিড়া, বামনার লক্ষ্মীপুরা, আমতলীর চাউলা বাজার, ছুরিকাটা, মহিষডাঙ্গা ও তালুকদার বাজার, তালতলা, শাখারিয়া বাজার, কড়ইবাড়িয়াসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ড্রাম-চিমনির মাধ্যমে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। এমনকি ফসলি জমি নষ্ট করেও ইটভাটা গড়ে উঠছে। আর ভাটার পাশে করাতকল বসিয়ে কাঠ চেরাই করে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে সেই কাঠ।
এসব ভাটা সংশ্লিষ্টরা স্বীকারও করছেন তারা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করে আসছেন।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে হাইব্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাটা করার কথা থাকলেও এখানে ইট পোড়ানো হচ্ছে বাংলা ও ড্রাম-চিমনির মাধ্যমে। বছরের পর বছর এভাবে অবৈধ ভাটা কীভাবে চালাচ্ছেন, এমন প্রশ্ন তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া এলাকায় স্থাপিত এইচবিএ ব্রিকসের ম্যানেজার গোলাম হায়দার গাজীর কাছে করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ইটভাটা চালানোর ক্ষেত্রে আমরা যতটুকু অনিয়ম করছি, তা কর্তৃপক্ষের থেকে অনুমতি নিয়েই করা হচ্ছে।
বরগুনা পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক আরিফ বাংলানিউজকে জানান, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে কঠিন আইন থাকা সত্ত্বেও কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রতি বছর রুটিন অনুযায়ী জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাঝে মধ্যে দু-একটি জায়গায় নামমাত্র মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। পরে দেখা যায়, সব অবৈধ ইটভাটাই মালিকদের ইচ্ছামতো পরিচালনা হচ্ছে।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইনুর আজম খান জানান, বরগুনায় যত্রতত্র বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে ফসলি জমিসহ গাছপালা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি কমে যাচ্ছে ফসলি জমি।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ইটভাটার ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের মতামত নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তারা তা কখনোই নেয় না।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরেফীন বাদল জানান, সব অবৈধ ইটভাটায় পর্যায়ক্রমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে শিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৮
আরএ