মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর রমনা কালী মন্দির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ঘুরেও দেখা গেছে তেমন চিত্রই। উৎসব উপলক্ষে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ সাজানো হয় লাল-নীল-সবুজ আলোর দ্বৈরাথে।
ঢাক-ঢোলের শব্দে কালী মায়ের সামনে যেমন নৃত্য-গীত ও ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রার্থনা করেছেন ভক্তরা, তেমনি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভক্ষণকেও আমন্ত্রণ করছে অনেকে। আবার বাজি ফোটানোর আনন্দেও মেতে উঠেছে শিশু-কিশোরেরা। ধূপ-ধুনোর গন্ধে মৌ মৌ হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। যার ঘ্রাণ পাওয়া অনেক দূর থেকেও।
মন্দির প্রাঙ্গণে কথা হয় পুরান ঢাকার অধিবাসী সৃজিতা চক্রবর্তীর সঙ্গে। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন মন্দিরে ঘুরে পূজো দেখছেন তিনি। সৃজিতা বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দীপাবলির উৎসব দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব। তাই সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন মন্দিরে ঘুরছি বন্ধুদের সঙ্গে। বেশ ভালো লাগছে। তবে সবথেকে ভালো লেগেছে বাজি ফোটানো আর প্রদীপ জ্বালিয়ে।
বাংলানিউজের সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সাবেক সভাপতি মানিক রক্ষিতের সঙ্গে। তিনি বলেন, অশুভ পরাশক্তিকে নাশ করার পর কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে শ্রীরামচন্দ্র অযোধ্যা নগরীতে তার প্রাণপ্রিয় ভক্তদের মধ্যে ফিরবেন। তার পায়ের ধুলায় পুনরায় ধন্য হবে এই নগরী। শ্রীরামচন্দ্রের আগমন বার্তা পেয়ে রাজা ভরত সমগ্র নগরে উৎসবের ঘোষণা দিলে নগরীতে আলোকসজ্জা করা হয়। আলোকিত হয়ে ওঠে অযোধ্যা।
সমস্ত অমঙ্গল, অকল্যাণ দূর হবে এই শুভ কামনায় পথে পথে, বাড়িতে বাড়িতে সর্বত্র মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন অযোধ্যাবাসী। শ্রীরামচন্দ্র অমাবস্যার অন্ধকারে প্রত্যাবর্তন করবেন, তাই অযোধ্যা নগরী আলোর প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়, যেন তাদের প্রাণপ্রিয় শ্রীরামচন্দ্র অমাবস্যার অন্ধকার দূর করে মঙ্গলময় আলোকে নগরীতে প্রবেশ করেন। সেই থেকে এই শুভ দিনটিতে অশুভ অন্ধকার দূর করার লক্ষ্যে আলোর প্রদীপ জ্বালানো হচ্ছে।
শক্তির আরাধনা, আলোর রোশনাই, হরেক রকম বাজির সমষ্টিই দীপাবলী। কোথাও আলোর মেলা তো কোথাও আবার বাজির তারতম্যে চক্ষু চড়কগাছ। রমনার কালী মন্দির ঘুরে দেখা গেল তেমন দৃশ্যই। মন্দির প্রাঙ্গণের একপাশে যেমন মঙ্গল প্রদীপ জ্বালছেন ভক্তরা, ঠিক তার পাশেই অনেকে মেতে উঠেছে বাজি ফোটাতে।
এ বিষয়ে কথা হয় মন্দিরে আসা ছোট্ট শিশু কলম কুমার হালদারের সঙ্গে। বাবা-মায়ের হাত ধরে দীপাবলির উৎসবে এসেছে সে। বাজিতে আগুন লাগিয়ে আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়ে কমল বলে, আজ তো অনেক আনন্দের দিন। বাবার সঙ্গে মন্দিরে এসে প্রথমেই প্রদীপ জ্বালিয়েছি। আর এখন বাজি ফোটাচ্ছি।
এদিকে আলোর উৎসবের পাশাপাশি রাতে রমনা কালী মন্দিরের সঙ্গে পূজা অর্চনা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মন্দিরেও। সেখানেও আনন্দ যজ্ঞে মেতে উঠেন বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা। আর আলোর রোশনাই ও শব্দে অতীষ্ট না হয়েই আলো ও শক্তির আরাধনাতেই মনোনিবেশ করছে আলোর উৎসবের ভক্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৮
এইচএমএস/আরআর